মমতার কড়া জবাব — “প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ ছাড়াই দোষারোপ করছেন!” প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পরই তৃণমূল শিবিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন,
“এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও উদ্বেগজনক যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কোনও তদন্তের ফল বা প্রমাণের অপেক্ষা না করেই একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রাজনীতিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যখন উত্তরবঙ্গের মানুষ এখনো ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের পর লড়ছে।”
advertisement
ডেলিভারি বয়ের অশালীন আচরণ ক্যামেরাবন্দি! তরুণীর শরীর স্পর্শের অভিযোগ! ভাইরাল ভিডিওয় চাঞ্চল্য
উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের মধ্যে রাজনৈতিক পারদ চড়ল দিল্লি-কলকাতা অক্ষে। বন্যা দুর্গত এলাকায় বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কের উপর হামলার অভিযোগে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর সেই অভিযোগের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বললেন, “প্রধানমন্ত্রী প্রাকৃতিক বিপর্যয়কেও রাজনীতির হাতিয়ার বানাচ্ছেন।”
শনিবার সন্ধ্যায় এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, “আমাদের দলের সহকর্মীরা — যাঁদের মধ্যে একজন সাংসদ ও একজন বিধায়ক রয়েছেন — তাঁদের উপর যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গে হামলা চালানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ নিন্দনীয়। তাঁরা বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করছিলেন, অথচ তাঁদেরই আক্রমণ করা হয়েছে। এটি রাজ্যের আইনের শাসনের ভয়াবহ অবস্থা এবং তৃণমূল সরকারের অসংবেদনশীলতার প্রমাণ।”
বিহার বিধানসভা নির্বাচনে কার্যকর ‘কোড অফ কন্ডাক্ট’! কী করা যাবে, আর কী যাবে না? ভাল ভাবে জেনে নিন
মোদির বক্তব্য, এই কঠিন সময়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকার মানুষের পাশে না থেকে সহিংস রাজনীতি করছে। তিনি আরও লেখেন,
“আমি চাই, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই সময় হিংসাত্মক আচরণ না করে মানবিকতার পরিচয় দিক। রাজনীতি নয়, এখন প্রয়োজন সাহায্য ও সহমর্মিতা।”
প্রধানমন্ত্রী বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান, যাতে তাঁরা ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটা, মালবাজার, জলপাইগুড়ি ও কালিম্পং-সহ একাধিক জেলায় প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি জলোচ্ছ্বাসে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু এলাকা প্লাবিত, বহু মানুষ গৃহহীন। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপির এক প্রতিনিধি দল দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গেলে হামলার অভিযোগ ওঠে। বিজেপির দাবি, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাদের কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে।
মমতার অভিযোগ, বিজেপি নেতারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় বিশাল গাড়িবহর নিয়ে দুর্গত এলাকায় পৌঁছেছেন, অথচ স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি।
“এ অবস্থায় রাজ্য প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ বা তৃণমূল কংগ্রেসকে দোষারোপ করার কোনও যুক্তি নেই,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন,
“প্রধানমন্ত্রী কোনও যাচাইকৃত প্রমাণ, প্রশাসনিক রিপোর্ট বা আইনি তদন্ত ছাড়াই তৃণমূল কংগ্রেস ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দোষ দিচ্ছেন। এটি কেবল রাজনৈতিক নিম্নতার উদাহরণ নয়, বরং সাংবিধানিক শপথেরও অবমাননা।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও কটাক্ষ করে বলেন,
“ঘটনাটি এমন এক এলাকায় ঘটেছে, যেখানে জনগণ নিজেরাই একজন বিজেপি বিধায়ককে নির্বাচিত করেছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী সেটিকেই তৃণমূলের তথাকথিত ‘শক্তিপ্রদর্শন’ হিসেবে দেখাচ্ছেন। এ এক অপ্রমাণিত ও অপরিণত সাধারণীকরণ, যা দেশের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কারও মুখে শোভা পায় না।”
তিনি আরও বলেন,
“একজন প্রধানমন্ত্রী যিনি মণিপুরে জাতিগত সহিংসতার ৯৬৪ দিন পর সফরে গিয়েছিলেন, তাঁর হঠাৎ এই উদ্বেগ বাংলার জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক সুবিধাবাদী নাটকের মতো মনে হচ্ছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা ছিল স্পষ্ট —“হ্যাঁ, আমরা হিংসার নিন্দা করি, কিন্তু এখন সময় পক্ষপাতের নয়। এখন সময় সাহায্য ও নিরাময়ের। বিজেপি উত্তরবঙ্গ বনাম দক্ষিণবঙ্গের বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে। আমি স্পষ্ট জানাতে চাই — বাংলা এক, আবেগগত, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে।”
শেষে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য,
“আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কেবল বিজেপির নন। আপনার দায়িত্ব জাতি গঠনের, আখ্যান গঠনের নয়। এই সংকটকালে আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি, দলীয় রাজনীতি নয়, মানুষের জীবন বাঁচানোই এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।”