রাজ্যের ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যে জেলায় সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম আলিপুরদুয়ার। জেলার ৫ বিধানসভা আসনেই পর্যুদস্ত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতের গরিষ্ঠ অংশ, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে থাকলেও, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন থেকে এখানে ধস নামতে শুরু করে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে যার রেশ থেকে গিয়েছিল। চা-বাগান, আন্তর্জাতিক সীমানা, আদিবাসী-রাজবংশী ভোট ও রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ পর্যটনক্ষেত্র। একাধিক সুযোগ সুবিধা থাকলেও এই জেলার খারাপ ফল অবশ্যই চিন্তায় রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে৷
advertisement
তাই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই এই জেলার সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করেছে শাসক দল। আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ ধরে চা-বলয়ের মানুষের মন বুঝতে চাইছে শাসক দল। তাই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আলিপুরদুয়ার সফর রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে এই উত্তরবঙ্গ সফরে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল অনুযায়ী এই জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ৬৬। যার মধ্যে তৃণমূলের দখলে ৪৩। বিজেপির দখলে ছিল ৯। বাম ও কংগ্রেস পেয়েছিল ১টি করে আসন৷ অন্যান্যরা পেয়েছিল ১২ টি।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে ফের ভাঙনের ইঙ্গিত দিলেন কুণাল
পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যা ছিল ৬। যার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ৫, বিজেপি পেয়েছিল ১, বাম-কংগ্রেস সহ বাকিরা একটিও আসন পায়নি৷ জেলা পরিষদের মোট আসন সংখ্যা ১৮। তার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ১৭ আসন। বিজেপি পেয়েছিল ১। বাম, কংগ্রেস-সহ বাকিরা একটিও আসন পায়নি। জেলার বেশিরভাগ অংশের ভোটই চা-বলয়ের ভোট।
যদিও সেই ভোটব্যাঙ্কে ধস নামে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে। যার ফলে বিজেপি প্রার্থী জন বারলা প্রায় ৫৫.২% ভোট পান৷ আর তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দশরথ তিরকে ভোট পান মাত্র ৩৭.৩%। ২০২১ এর এই জেলায় বিধানসভা ভিত্তিক ফলের বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে এই জেলার ৫ বিধানসভা আসনের প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৫০.৪% আর তৃণমূল কংগ্রেস ৪০.৪% ভোট। ফলে জেলার ৫ বিধানসভা আসনই হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের।
আরও পড়ুন: এখনও জ্বলছে চট্টগ্রামের ডিপো! চারিদিকে পোড়া মৃতদেহ, হাহাকার
ফালাকাটা বিধানসভা আসন, যেখানে বিজেপি প্রার্থী দীপক বর্মণ পেয়েছেন ৪৬.১৭% ভোট, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুভাষ চন্দ্র রায় পেয়েছিলেন মাত্র ৪৪.৯% ভোট। কুমারগ্রাম বিধানসভা যেখানে বিজেপি প্রার্থী মনোজ ওঁরাও পান ৪৮.১৭% ভোট, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী লুইস কুজুর পেয়েছিলেন ৪৩.৪৪% ভোট। মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলপ্রার্থী রাজেশ লাকড়া পেয়েছিলেন ৩৬.৫৭% ভোট, সেখানে মনোজ টিগগা পান ৫৪.৩৫% ভোট। কালচিনি বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী বিশাল লামা পেয়েছিলেন ৫২.৬৬% ভোট, সেখানে পাশাং লামা তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩৮.০৭% ভোট। আলিপুরদুয়ার বিধানসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী সুমন কাঞ্জিলাল পান ৪৮.১৯% ভোট, তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সৌরভ চক্রবর্তী পেয়েছিলেন ৪১.০১% ভোট।
চা-বলয়ের এই জেলায় ভোটের ফল খারাপ নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের মতে খারাপ ফলের কারণ, সংগঠন। বিশেষ করে চা-বাগানগুলিতে নিজেদের সংগঠন মজবুত করতে পারেনি তৃণমূল। এ ছাড়া ১০০ দিনের কাজ, কাঠ পাচারের মতো ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ কালচিনিতে গ্রেফতার করা হয় পাশাং লামাকে। যার বিরুদ্ধে কাঠ পাচারের অভিযোগ উঠেছিল। রাজনৈতিক মহলের মতে, নয়া জেলা সভাপতি বাগান শ্রমিকদের কাছের মানুষ হিসাবে পরিচিত হলেও চা-বাগানের একেবারে নীচু স্তরে গিয়ে শ্রমিকদের মন বোঝার মতো বুথ স্তরীয় সংগঠন মজবুত করতে হবে। চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য চা-সুন্দরীর মতো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে৷ তবে চা-বাগানের মন বুঝে সেখানে বুথ স্তরে সংগঠন মজবুত করতে আরও কোমর বেঁধে নামতে চলেছে রাজ্যের শাসক দল।
ABIR GHOSHAL