১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া, বিধানসভার অধিবেশনে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বসাতে নিয়ম করে প্রতিদিনই বিল সংশোধন করে চলেছে সরকার। সেই তালিকায় মঙ্গলবার ছিল স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধনী বিল। বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, মুকুটমণি অধিকারীরা বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে রাজ্যের একজন সেরা রাজনীতিক। তাঁর রাজনৈতিক যোগ্যতা নিয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে তাঁকে যোগ্য বলে আমরা মনে করি না। মুখ্যমন্ত্র ও আরও সাত, আটটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যের এতগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।'
advertisement
আরও পড়ুন: কেকে-র অনুষ্ঠানে কীভাবে কত খরচ, সৌগত রায়কে ই-মেল করে হিসেব পাঠালো তৃণমূল ছাত্র পরিষদ
জবাবি ভাষণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, 'আচার্য মানে হল 'গুরু'। তিনি শিক্ষা বা ধর্মীয় বা সামাজিক, যে কোনও ক্ষেত্রেই গুরু হতে পারেন। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় 'সামাজিক শিক্ষাগুরু'। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী শুধু রাজনীতি করেন না। তিনি সামাজিক কাজও করেন। তাঁর সামাজিক চিন্তার সুবাদেই আমরা কন্যাশ্রীর মতো জনপ্রিয় সামাজিক প্রকল্প পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর দূরদর্শিতার জন্যই তাঁকে অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কন্যাশ্রীর অনুকরণে ' বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও " এর মতো প্রকল্প চালু করেছেন। এই সবই মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সামাজিক শিক্ষার ফসল। এই যে আমরা কথায় কথায় বলি, 'হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টু ডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো' - এতো মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দূরদৃষ্টির জন্যই সম্ভব হয়েছে। তাহলে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে সামাজিক শিক্ষাগুরু বলব না কেন? আর, সামাজিক শিক্ষাগুরু তো বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হতেই পারেন।'
বিধানসভার চলতি অধিবেশনের শুরু থেকেই এই আচার্য বিল নিয়ে বিতর্ক চলেছে৷ মঙ্গলবার বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সিপিএম থেকে বিজেপিতে আসা শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সরকারের আনা বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে শঙ্কর বলেন, ''৩৪ বছরের বাম সরকারের আমলে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে 'অনিলায়ন' হয়েছিল। বর্তমান সরকার সেই অনিলায়নকে আইনি জামা পরাচ্ছে।''
জবাবে, মন্ত্রী চন্দ্রিমা বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, 'সারা দেশে বিজেপি যদি মোদিয়ায়ন, অমিতায়ন করতে পারে, তাহলে এখানে মমতায়ন হওয়া আটকাবে কেন? পবিত্র সরকার এর মতো বামপন্থী বা দক্ষ্মিণপন্থী অমল মুখোপাধ্যায়দের মতো শিক্ষাবিদদের মতে, এটা ঠিক বাম আমলে সিপিএম শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতিকরণ করেছে। তাকে অনিলায়ন বা যে কোনও নামেই ডাকা হোক না কেন, সিপিএমের সেই রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধেই রাজ্যের মানুষ বাম আমলেই বারবার প্রতিবাদ করেছে। ২০১১-তে রাজ্যে সিপিএম তথা বামেদের সরিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল সিপিএমের এই নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে জনমতের সুবাদে। কিন্তু, আজ রাজ্য সরকারের এই বিল সংশোধন করা দেখে সেই পুরনো প্রবাদটির কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে। ওল্ড ওয়াইন ইন নিউ বটল ( নতুন বোতলে পুরনো মদ)।'
