২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট-এর ভিত্তিতে ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যে দ্বিতীয় নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করে, তা বেআইনি বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ ওই তালিকা অনুযায়ী ২৬৯ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল৷ একই সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং পর্ষদের সচিবকে আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সিবিআই দফতরে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷
advertisement
আরও পড়ুন: বেনজির রায় আদালতের, বিচার শেষ হয়ে যাওয়া বালির তপন দত্ত খুনের তদন্তে এবার সিবিআই!
২০১৪ সালে প্রাথমিক টেট-এ পরীক্ষায় বসেছিলেন প্রায় ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী৷ এদের মধ্যে ২৬৯ জন এক নম্বর করে বাড়িয়ে সফল হয়৷ তার মধ্যে হুগলি জেলাতেই ৬৮ জন। ২৬৯ জনকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব নেয় পর্ষদ। প্রস্তাব রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের কাছে পাঠানো হয়। শিক্ষা দপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষেই নতুন নিয়োগ তালিকা প্রকাশিত করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সেই তালিকা প্রকাশিত হয়৷ এ দিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত এমনই তথ্য দেন আদালতকে৷
পর্ষদের আইনজীবীর দেওয়া এই তথ্য শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়৷ কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কীভাবে ২৬৯ জনের জন্য নিয়োগ তালিকা প্রকাশিত হল, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ তাছাড়া, প্রশ্ন ভুলের অজুহাতে কীভাবে শুধুমাত্র ২৬৯ পরীক্ষার্থীর এক নম্বর করে বেড়ে গেল, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি৷ বিস্মিত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?' কীসের ভিত্তিতে এই ২৬৯ জনকে চিহ্নিত করা হল, তাও জানতে চান তিনি৷
আরও পড়ুন: অশান্তিতে ধৃতদের সর্বোচ্চ শাস্তি, কাউকে রেয়াত নয়, জানালেন এডিজি আইনশৃঙ্খলা
জবাবে পর্ষদের আইনজীবী জানান, যোগ্যদের বঞ্চনা করা হয়েছে, এই অভিযোগে বিক্ষোভ আন্দোলন হয়। আন্দোলনকারীরা পর্ষদে আবেদন করেন। জেলা ভিত্তিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেট পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন জমা পড়ে। সেই আবেদন থেকেই প্রশ্ন ভুলে ১ নম্বর করে যোগ করে ২৬৯ জন টেট উত্তীর্ণ হন।
যদিও পর্ষদের আইনজীবীর এই যুক্তি মানতে চাননি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ ওই নিয়োগ তালিকা বেআইনি ঘোষণা করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি৷ পাশাপাশি ওই ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন তিনি৷ এই শিক্ষকরা যাতে আগামিকাল থেকে স্কুলে ঢুকতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিদর্শকদের নির্দেশ দেন বিচারপতি৷
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও নির্দেশ দেন, আজ থেকেই এই মামলার এফআইআর দায়ের করে অভিযোগের তদন্ত শুরু করবে সিবিআই৷ যেহেতু নিয়োগে এই অনিয়মের দায় পর্ষদ সভাপতি এড়াতে পারেন না, তাই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং পর্ষদের সচিবকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সিবিআই-এর মুখোমুখি হতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি৷ রমেশ মালিক নামে এক টেট পরীক্ষার্থীর করা মামলার ভিত্তিতেই এ দিন এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷