তবে, সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের ভিত্তিতে হাইকোর্ট জানিয়েছে, আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাতে হবে, তিনি মুকুল রায়কেই পিএসি চেয়ারম্যান হিসেবে রাখছেন কিনা। তৃণমূল সূত্রের খবর, হাইকোর্টের রায়ের পর মুকুল রায়কে নিয়ে কিছুটা সাময়িক স্বস্তি পেল দল। তবে স্পিকারের সিদ্ধান্তের পর হাইকোর্ট এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে রাজনৈতিক মহল।
advertisement
আইনজীবী মহল বলছে, মুকুল রায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি চেয়ারম্যান পদে থাকবেন কিনা প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে, তাঁর বিধায়ক পদ বাতিলের মধ্যে। কাজেই বিধায়ক পদ বাতিল হলেই পিএসি চেয়ারম্যান বিবাদেরও নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। জনস্বার্থ মামলার রায়ে এমনই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ ডিভিশন বেঞ্চের। ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশিকায় জানিয়েছে, বিধায়ক পদ বাতিল এবং পিএসি চেয়ারম্যান পদ বাতিল পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত।
বিধায়ক পদ বাতিল হলে, PAC চেয়ারম্যান পদে মুকুল রায় থাকবেন কিনা তাঁরও নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বিধায়ক পদ বাতিলের আবেদন পাওযার পর সেই সংক্রান্ত আবেদনের নিষ্পত্তির সম্ভাব্য সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৭ অক্টোবর ২০২১-এর মধ্যে। সুপ্রিম কোর্টের দেখানো পথ বিধানসভার স্পিকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের কে এম সিং মামলার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট। ৭ অক্টোবরের মধ্যে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ বাতিল নিয়ে অবস্থান জানাবেন স্পিকার। সেই কাজে স্পিকার ব্যর্থ হলে কলকাতা হাইকোর্ট আইনানুগ পদ্ধতি মেনে পদক্ষেপ করবে।
অর্থাৎ এককথায় মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ বাতিল নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন আগে স্পিকার। ৩ মাসের মধ্যে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ বাতিল চেয়ে বিরোধী দলনেতার করা আবেদনের নিষ্পত্তি করার কথাই পরোক্ষে বুঝিয়ে দিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, পিএসি চেয়ারম্যান পদ থেকে মুকুল রায়কে খারিজের দাবিতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়। BJP বিধায়কের আইনজীবী আদালতের কাছে সওয়ালে বলেছিলেন, গত ৫৪ বছর ধরে বিরোধী শিবির থেকেই বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়। এটা একপ্রকার প্রথা হিসেবেই চলে আসছে। মুকুল রায় বিজেপির থেকে জিতে বিধায়ক হলেও এখন তিনি তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। তাই এই পরিস্থিতিতে মুকুল রায়কে পিএসি চেয়ারম্যান করে প্রথা ভেঙেছে শাসক দল।
আরও পড়ুন: ভবানীপুরে কি নির্ঘণ্ট মেনেই ভোট? জল্পনা শেষে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট
গত ২৪ অগস্ট এই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানতে চান, পিএসি চেয়ারম্যান হতে কি কোনও রাজনৈতিক ছাড়পত্র লাগে? তিনি এও জানতে চান, পিএসি-র চেয়ারম্যান কি বিরোধী দল থেকে করাটাই নিয়ম? সরকার ও মামলাকারীর আইনজীবী উভয় পক্ষের কাছেই এ বিষয়ে মতামত চেয়েছিলেন তিনি।
রাজ্যের তরফে অবশ্য এ বিষয়ে হলফনামা পেশ করে জানানো হয়েছিল, সংবিধানে ২১২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, বিধানসভার অন্দরে কোনও বিষয় যদি বিচারাধীন অবস্থায় থাকে, তাহলে তাতে বিচার ব্যবস্থার রায়ের কোনও এক্তিয়ার থাকে না। যদিও তৃণমূল বারবারই বলে এসেছে, মুকুল রায় কাগজেকলমে এখনও কৃষ্ণনগরের বিজেপি বিধায়ক। তাই তাঁকে পিএসি চেয়ারম্যান করায় কোনও প্রথা ভাঙা হয়নি।
