কথা হচ্ছিল শীল বাড়ির সদস্যদের সাথে। জয়ন্ত শীল জানাচ্ছেন, "গত দুই বছর ধরে ঘর হারানোর যন্ত্রণা পাচ্ছি।" শীল বাড়ির মেয়ের বিয়ে হয়েছে, অন্য বাড়ি থেকে। শীল বাড়ির অন্দরে ছিল নানা জিনস। সবই এখন ইতিহাস। এক বছর পরে, বউবাজারের অলিতে গলিতে এখন একটাই আলোচনা কবে, আবার স্বাভাবিক হবে বউবাজার। অন্য দিকে বউবাজার নিয়ে একটাই মাথাব্যথা এখন। কখন, কী ভাবে তুলে আনা হবে টানেল বোরিং মেশিন চান্ডিকে।
advertisement
বউবাজার বির্পযয়ের এক বছর পরে শুরু হয়েছিল টানেল বোরিং মেশিন চান্ডি'কে তুলে আনার প্রক্রিয়া । ২০১৯ সালের ৩১ অগাস্ট ভেঙে পড়ে বউবাজারে একের পর এক বাড়ি। দূর্গা পিতুরী লেন, স্যাকরা পাড়া লেন-সহ বিভিন্ন বাড়িতে ফাটল ক্রমশ চওড়া হয়। তারপরে তাসের ঘরের মতো একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়ে। যার জেরে বউবাজারের দুর্গা পিতুরী লেনে আটকে যায় টিবিএম চান্ডি। অপর টানেল বোরিং মেশিন উর্বি যদিও মাটির নীচে কাজ শুরু করে দেয়। সে ধীরে ধীরে কাজ শেষ করেছে শিয়ালদহ স্টেশনের দিকে। শিয়ালদহ পৌছে গেলে আবার মুখ ঘুরিয়ে উর্বিকে নিয়ে আসা হয়েছিল চান্ডির পথে। সেই কাজও শেষ করেছে। তারপর তাকেও তুলে ফেলা হবে। সেই টানেল বোরিং মেশিন তুলে ফেলার জন্য অবশেষে কাজ শুরুও করে দিয়েছে কেএমআরসিএল।
এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহ অবধি মেট্রো প্রকল্প নির্মাণকারী সংস্থা দুর্গা পিতুরী লেনে তৈরি করা হচ্ছে একটি বিশাল চৌবাচ্চা। যার মধ্যে থেকে তুলে আনা হবে চান্ডি'কে। সেই কাজ করার জন্য অস্ট্রিয়া থেকে নিয়ে আসা হয়েছে একটি বিশেষ মেশিন। সেই মেশিন পরিচিত ডাব্লুটিএফ নামে। যা মাটির প্রায় ৪০ মিটার নীচে থেকে তুলে আনবে টানেল বোরিং মেশিনকে। যে জায়গায় এই কাজটি করা হচ্ছে সেখানে যে চৌবাচ্চা করা হয়েছে তা প্রায় ৪০ মিটার লম্বা, ১০ মিটার চওড়া ও গভীরতা প্রায় ৩৫ মিটার। এই গভীর চৌবাচ্চা ঘিরে থাকছে মোট ১৩০টি পিলার। যে পিলার লোহা দিয়ে বানানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি পিলার একে অপরের সাথে এমনভাবে যুক্ত থাকছে যাতে চান্ডি'কে তুলে আনার সময়ে কোনও ভাবেই পাশের মাটির ধস না নামে। ফের ধস নামলে কাজের ক্ষতি হবে। এলাকায় আবার নতুন করে বির্পযয় নেমে আসতে পারে। ফলে অত্যন্ত সাবধানে সেই কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই বউবাজারের দুর্গা পিতুরী লেনে এসে গিয়েছে অস্ট্রিয়া থেকে ডাব্লু টি এফ মেশিন। চৌবাচ্চা বানানোর কাজ শুরু শেষ হয়ে গিয়েছে।
একদিকে চলছে বাকি কাজের জন্যে লোহার পিলার বানানোর কাজ। কেএমআরসিএলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সিভিল বিশ্বনাথ দেওয়ানজী জানিয়েছেন, "টিবিএম তুলে ফেলার জন্যে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সেই কাজ শুরু করা হয়েছে। এই কাজ করতে কমপক্ষে আর কয়েক মাস সময় লাগবে। তারপরে টিবিএম চান্ডিকে তুলে ফেলা যাবে।" দুই বছর আগে ৩১ আগস্ট ভেঙে পড়ে বউবাজারের একের পর এক বাড়ি। এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহ অবধি মেট্রো কাজ চলার সময়ে ধস নামে মাটির নিচে। যার জেরে মেট্রোর কাজ ব্যাহত হয়। বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে সেই কাজ শুরু করা হয়েছিল। তবে মাটির নীচে আটকে পড়া টিবিএম চান্ডি দিয়ে আর কাজ করা যায়নি। ফলে তাকে তুলে ফেলতেই হবে। এই গোটা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলে বউবাজারে ফের শুরু হবে বাড়ি বানানোর কাজ।