শুক্রবার বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষন বিতর্কে অংশ নিয়ে বিজেপির কার্শিয়ংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা বলেন, ''রাজ্যপালের ভাষনে পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করা হয়েছে। পাহাড় যদি শান্তিপূর্ণ থাকে তাহলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে জিটিএ নির্বাচন কেন করা হচ্ছে? কেন ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানায় না রাজ্যের শাসক দলের সাংসদরা? আসলে, পাহাড়ে রাজ্যের বশংবদ জিটিএ-কে রেখে দেওয়াই রাজ্যের শাসক দলের লক্ষ্য। কিন্তু, গোর্খারা জিটিএ চায় না। "
advertisement
আরও পড়ুন: লক্ষ্য তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসানো, সংখ্যালঘুদের মন পেতে এখন মরিয়া বঙ্গ বিজেপি
বিধানসভায় বরাবরই পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সরব হয়েছেন বিষ্ণুপ্রসাদ। স্বাভাবিকভাবে, শুক্রবার বিধানসভায় তাঁর এই ইঙ্গিতপূর্ণ বিবৃতির পর বিষ্ণুপ্রসাদকে নিয়ে কৌতুহলের পারদ চড়তে থাকে।
অধিবেশনের শেষে পাহাড় ও পৃথক রাজ্যের বিষয়ে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হলে কার্শিয়ংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ সাফ জানান, 'আমরা বাংলায় থাকতে চাই না। গোর্খা জনজাতি রাজ্যের সঙ্গে থাকতে চায় না। পাহাড়ে গোর্খাদের জন্য আলাদা রাজ্যের দাবি থেকে আমি সরছি না। যতদিন না আলাদা রাজ্য হবে ততদিন আমি এই দাবি জানাতে থাকব৷'
রাজ্যভাগের দাবিতে বিজেপির উত্তরবঙ্গের বিধায়ক, সাংসদদের সরব হওয়া নতুন কিছু নয়। যদিও, উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা রাজ্য বা পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সরকারি ভাবে কখনও সমর্থন করে না বিজেপি। বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের মতে, রাজ্যের বিমাতৃসুলভ আচরণে উত্তরবঙ্গের মানুষের মনে বঞ্চনা আর ক্ষোভ রয়ছে। তা থেকেই পৃথক রাজ্যের দাবি উঠছে। জনপ্রতিনিধি হিসাবে বিধায়ক, সাংসদরা সেই দাবির কথাই তুলে ধরেছেন। কিন্তু, বাম, কংগ্রেস থেকে তৃণমূল মনে করে, এটা আসলে বিজেপির কৌশল। সরকারিভাবে রাজ্যভাগের বিরোধিতা করে, পিছন থেকে রাজ্যভাগের জন্য উস্কানি দিয়ে গোর্খা সহ পাহাড়ের জনজাতি মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে রাখতে চায় বিজেপি।
আরও পড়ুন: 'চার চাকা গাড়ির লোভে তৃণমূলে গেছে'! এবার কাকে নিশানা করলেন শুভেন্দু?
পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন নিয়ে সলতে পাকানো শুরু হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি জিটিএ-এর সিইও অনীত থাপা বিধানসভায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একই সঙ্গে বিজেপির রাজ্যভাগের চক্রান্তের বিরুদ্ধে সভা করতে শনিবার কোচবিহার যাচ্ছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এই আবহে আজ বিধানসভায় জিটিএ নির্বাচনের বিরোধিতা করে পৃথক রাজ্যের দাবিতে বিজেপি বিধায়কের সরব হওয়াকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় বঙ্গভঙ্গের চক্রান্তের বিরোধিতা করে প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ আজ রাজ্যের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বিষ্ণুপ্রসাদ বলেন, বিধানসভায় এই প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। রাজ্য এই প্রস্তাব আনলে সদনে আমার বক্তব্য জানাব।'
পর্যবেক্ষকদের মতে, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিধানসভায় বিজেপির পক্ষে সরকারের প্রস্তাবের বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে, এই ইস্যুতে দলের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ রাজ্য ভাগের পক্ষে সওয়াল করে দলকে বিপাকে ফেলেন কি না সেটাই এখন দেখার।