এ দিন বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন সব্যসাচী দত্ত। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজির সমালোচনা করেন। সব্যসাচী বলেন, "বহিরাগতরা এসে নির্বাচন করলে যা হয়, তাই হয়েছে। টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু সঠিক জায়গায় খরচ হয়নি।"
নির্বাচনের আগে বিজেপি হঠাৎই সিদ্ধান্ত নেয় সাংসদদের ভোটে লড়ানোর। হঠাৎ করেই স্বপন দাশগুপ্ত, নীশিথ প্রামাণিক, লকেট চট্টোপাধ্যায়দের ময়দানে নামিয়ে দেওয়া হয়। এই খেয়ালখুশি নীতির বিরোধিতাই করেছেন অর্জুন সিং, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। অর্জুনের প্রশ্ন, আমি একজন সাংসদ, প্রার্থী করার আগে কেন্দ্রীয় নেতারা আমার সঙ্গে কোন আলোচনা করবেন না? একই সুরে লকেটও বললেন, "প্রার্থী নির্বাচনে অনেক ভুল ছিল। আচমকা সাংসদদের প্রার্থী করে দেওয়া হল।" অর্জুনের মুখেও এল বহিরাগত তত্ত্ব। বললেন, "বহিরাগতদের বাংলার রাজনীতি কি আমরা বহিরগতদের থেকে শিখব? "
advertisement
প্রসঙ্গত অর্জুন সিং বিজেপিতে এসেছেন তৃণমূল থেকেই। কিন্তু তাঁর আগমন ভোটের অব্যবহিত পূর্বে নয়। অন্য দিকে সব্যসাচী দত্ত কিছুটা হলেও নতুন। তাঁর আগমন মুকুল রায়ের হাত ধরে। স্পষ্টতই তাঁর ঘরাণা আলাদা। কিন্তু তাঁকেও নবাগত বলা চলে না। অথচ এই জোড়া সমালোচনার জবাবে সায়ন্তন বসুকে বলতে শোনা গেল, "তৃণমূল থেকে যাদের বিজেপিতে এনে বড় নেতা বানানো হয়েছিল, প্রার্থী করা হয়েছিল, আজকের বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতা ও তাদের কৌশলের সমালোচনায় তারাই ছিলেন সবচেয়ে বেশি সরব। " অর্থাৎ লবির লড়াইটা যেন কিছুতেই চেপে রাখা গেল না।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের বৈঠকে একদা মমতা ঘনিষ্ঠ সব্যসাচী তাঁর মাস্টার প্ল্যান জানিয়েছিলেন। মমতার কায়দাতেই মমতাকে চাপে রাখতে এবং শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে, ঘর ছাড়া, সন্ত্রাসের শিকার পরিবারের একাংশকে কলকাতায় এনে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্ণার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সব্যসাচী। কিন্তু বৈঠকে তাঁর প্রস্তাব গৃহীত হয়নি।
মঙ্গলবারের বৈঠকে বিস্তর কূটতর্ক উঠে এসেছে। এটুকু পরিষ্কার হয়েছে যে বিজেপির ভিতর বহুস্রোত খেলা করছে। কিন্তু ভাষাগত ( হিন্দি) সমস্যার জন্য যে মানুষকে কেন্দ্রীয় অনেক প্রকল্পের সুবিধা বোঝানো যায়নি, এ কথা বেশির ভাগ নেতাই মেনে নিচ্ছেন। ভেঙ বললে, রাজনাথ সিং, স্মৃতি ইরানি, যোগী আদিত্যনাথদের নিয়ে আসাটা যেন স্থূলেই ভুল।
বিষয়টি স্পষ্ট করে বললেন সব্যসাচী দত্ত। তাঁর কথায়, "প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহ বা জেপি নাড্ডার কথা বাদ দিলে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা মন্ত্রী এসেছেন প্রচারে কিন্তু, লাভ হয় নি। স্মৃতি ইরানি যদিও বাংলায় বলতে পারেন, তাঁর কথা মানুষ শুনতে পারে, কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে এটা হয়নি।" বলাই বাহুল্য হিন্দিভাষী নেতাদের এ রাজ্যের মানুষ যে বর্জন করেছে, তা স্বীকার করছেন সব্যসাচী।
তাঁর মুখেও যেন আত্মসমালোচনার সুর। বললেন, "মমতার বিপরীতে আমাদের মুখ ছিল না। বিধাননগরের মত পস এলাকায় আমাকে অনেকে বলেছে, তোদের মুখ্যমন্ত্রীকে? তৃণমূল মাইক্রোম্যানেজমেন্ট করেছে।আমরা ম্যাক্রোতে ছিলাম। বড় বড় প্রচার করেছি। আমারা বুথ সামলেছি। "
বৈঠক হল, দলে থেকে দলের ভুল পর্যালোচনাও হল। কিন্তু এই ভুল থেকে কি বিজেপি শিক্ষা নেবে? উল্লেখ্য এদিনই বিজেপি একটি তিন সদস্যের আইনশৃঙ্খলা কমিটি তৈরি করেছে। ফলে প্রশ্ন করার অবকাশ আগামী দিনে কতটা থাকবে, চর্চা তাই নিয়েই।