মাটি, গাছ, অরণ্য, ঝরনা, টিলা। পাশাপাশি স্থানীয় আদিবাসী, লোকশিল্পী-সহ আস্ত একটা জঙ্গুলে জনপদ। সেটাই উঠে এসেছিল খাস কলকাতার নামী পুজোয়। এ যেন ইট-কাঠ-পাথরের শহরের সঙ্গে সবুজ গন্ধমাখা অরণ্যের এক অনন্য মেলবন্ধন। এমনই ব্যতিক্রমী প্রয়াস এবার ডানা মেলছিল সুকিয়া স্ট্রিটের এই রামমোহন সম্মিলনীর দুর্গাপুজোয় । যার উদ্বোধন হয়েছিল থিম বর্ণিত সেই অঞ্চলেই যা মণ্ডপ থেকে ১৮১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অবশ্যই নজরকাড়া ঘটনা। এমন চমক আগে কোনও পুজো উদ্যোক্তার মাথায় আসেনি। সেই অভূতপূর্ব ঘটনা এবার তুলে এনেছিল রামমোহন সম্মিলনী।
advertisement
আরও পড়ুন: রাজস্থানকেও এবার হার মানাবে কলকাতা! কোন ক্ষেত্রে? কার্নিভাল শেষে জানালেন ফিরহাদ
আরও পড়ুন: টানা সাড়ে চার ঘণ্টা, কার্নিভালে চমক দিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তর কলকাতার এপিসি রোড ধরে খানিকটা এগিয়ে ডানদিকে ঘুরলেই তাদের মণ্ডপ৷ ঝাড়গ্রাম, বাঁশপাহাড়ি, ভুলাভেদা, বেলপাহাড়ি, শিলদা, জামবনি ঘেরা জঙ্গলমহল। পুজোর মুখ্য উপদেষ্টা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। তিনিই কার্যত ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’। রামমোহন সম্মিলনীর সদস্য, প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষও ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জঙ্গলমহলের বিশিষ্ট নাগরিকরা।
রামমোহন সম্মিলনীর সদস্য অনির্বাণ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, শাল, পিয়াল, মহুয়া, জারুলের উপত্যকা, দুন্দুভির শব্দ, পিন পড়লে আওয়াজ পাওয়া যায় এমন নিস্তব্ধতা অনুভব করা গিয়েছিল উত্তর কলকাতার বুকে। পিচ রাস্তায় কান পাতলেই শোনা যাবে, ‘ধামসা বানায় দে, একটা মাদল কিনে দে…।’ জঙ্গলমহলের শিল্পীরাও হাজির ছিলেন মণ্ডপ তল্লাটে। মেগা কার্নিভালেও সেই চেহারায় দেখা গেল তাঁদের।।সুকিয়া স্ট্রিটের রামমোহন সম্মিলনী দশভুজার আহ্বান এবার ৭৮ বছরে। পুজোয় তাদের থিম ‘জঙ্গলকন্যার জগৎ।’
শিল্পী তাপসী সাহা চক্রবর্তী দশ আঙুলে তিল তিল করে তৈরি করেছিলেন জঙ্গলকন্যাকে। যে কন্যা তাঁর বুকে ধরে আছে মুণ্ডা, লোধা, শবর, কুরমি, খেড়িয়া, বাগদিদের। এ পুজোর মস্তিষ্ক যেহেতু জঙ্গলমহল, তাই থিমের উদ্বোধন হয় সেখানেই। জঙ্গলমহলে যেমন নিকোনো উঠোনের মাটির বাড়ি দেখা যায়, মণ্ডপ ছিল তেমনই মাটির তৈরি। কার্নিভালের অনুষ্ঠানে পা মেলান মন্ত্রী নিজেই।