বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের ক্যাবিনেটের অন্যতম সদস্য ও বিধায়ক অগ্নিমিত্রাকে করা হোয়াটসঅ্য়াপ মেসেজে, নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মুখপাত্র, প্রাক্তন আই পি এস ভারতী ঘোষ। যদিও, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভারতীর এই পোস্টের সত্যতা যাচাই করেনি নিউজ ১৮ বাংলা।
আরও পড়ুন: বঙ্গ বিজেপি'র কর্মীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি!
advertisement
গত ৩০ ডিসেম্বর হাওড়া স্টেশন থেকে হাওড়া - নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত বন্দে ভারতে এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করতে কলকাতায় আসার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। হঠাৎই মায়ের মৃত্যুর জন্য রাজ্য সফর বাতিল করলেও, কর্মসূচি বহাল রাখেন মোদি। ভিডিও কনফারেন্সিং- এর মাধ্যমে হাওড়া স্টেশন থেকে বন্দে ভারতের যাত্রা শুরুর সূচনা করেন মোদি।
মোদির এই কর্মসূচিকে ঘিরে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভারতীর দাবিতে দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসাবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা থাকলেও, রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে কোনও প্রবেশপত্র পাঠায়নি। ভারতীর আরও অভিযোগ, শুধু তিনি নন, তার মতো রাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাও এই আমন্ত্রণ পাননি। তবে, ভারতীর মতে, তাঁর কাছে এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত একবছর ধরেই তাঁর সঙ্গে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান থেকে তাঁকে দূরে রাখতে পরিকল্পিত ভাবে তাকে আমন্ত্রন জানানো হয়নি বলে অভিযোগ ভারতীর।
হাওড়া স্টেশনে ওই দিনের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ সহ যাবতীয় দায়িত্ব ছিল রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক ও বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের উপর। দলীয় এক নেতার থেকে নাকি ভারতীর ক্ষোভের কথা শুনে বিষয়টির খোঁজ নেন অগ্নিমিত্রা। তারই ভিত্তিতে ঘটনার ১০ দিন পরে, ভারতীকে তিনি জানান, তাঁর ক্ষোভের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন, রাজ্য বিজেপির কল সেন্টার থেকে তাঁকে ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, একইসঙ্গে আমন্ত্রণ জানাতে না পারার জন্য অগ্নিমিত্রা দুঃখপ্রকাশ করেন ভারতীর কাছে। অগ্নিমিত্রার এই সাফাইয়ের জেরেই পাল্টা তোপ ভারতীর।
আরও পড়ুন: মমতা 'প্রধানমন্ত্রী'? অমর্ত্য সেনকে এবার তীব্র কটাক্ষ বিজেপির রাহুল সিনহার! যা বললেন...
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভারতীর জবাবে দেখা গিয়েছে, অগ্নিমিত্রার দাবি উড়িয়ে ভারতী লিখেছেন, প্রথমত তাঁকে ফোন করে পাওয়া যায়নি এটা সর্বৈব মিথ্যে৷ তিনি একজন প্রাক্তন আইপিএস. প্রয়োজনে তিনি এর প্রমাণ দিতে তৈরি আছেন। ভারতীর মতে, দলের ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য যেখানে ২ থেকে ৩ বার ফোন করার পাশাপাশি বার্তা পাঠানো হয়, তখন এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানের জন্য মাত্র একবার ফোন করেই দায় সেরে ফেলা হল কীভাবে?
এই প্রসঙ্গেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ভারতী, দিলীপ ঘোষের জামানার দৃষ্টান্ত টেনে বলেছেনন, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সময়ে এই পরিস্থিতি ছিল না।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই লেখাতেই, এরপরেই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্র বিলি নিয়ে রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, যাঁদের আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল তাঁদের বদলে যাঁরা সেদিন প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলেন, তাঁদের পরিচয় কি খতিয়ে দেখা হয়েছিল সঠিকভাবে? এ ধরনের ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার পক্ষে মোটেই ভাল বার্তা নয়। কার্যত আমন্ত্রণ না থাকা সত্বেও, যাঁরা সেদিন মঞ্চের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন, তাঁরাই প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের একটি সভার মর্যদা ও গুরুত্ব না দিয়ে কার্যত পণ্ড করতে বসেছিলেন বলেও অভিযোগ ভারতীর।
সেদিন রেলের অনুষ্ঠান মঞ্চের কাছে মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছতেই জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে শুরু করে কিছু যুবক। এই ঘটনায় দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে না গেলেও, মঞ্চে উঠতে অস্বীকার করেন। যা নিয়ে ব্যাপক গোলমাল হয়। শেষমেশ, রেলমন্ত্রী ও রাজ্যের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামল দেন উদ্যোক্তারা।
ওই সামাজিক মাধ্যমের লেখাতেই, অগ্নিমিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের কাছে ভারতী প্রশ্ন তোলেন, সেদিন তাঁর মতো যাঁদের আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা ছিল, তারা যদি আমন্ত্রণ না পান, তাহলে সেই আমন্ত্রণ পত্র কি রেলকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল? নাকি প্রকৃত আমন্ত্রিতের নাম মুছে, সেখানে অন্য কারও নাম লেখা হয়েছিল বিশেষ কোন কারণে?
রাজনৈতিক মহলের মতে, সেদিন মুখ্যমন্ত্রীকে জয় শ্রী রাম ধ্বনি দেওয়া অভিযুক্তরা কীভাবে, মঞ্চের ভিভিআইপি এনক্লোজারে পৌঁছল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্য প্রশাসন। ভারতীর তোলা প্রশ্নে অনেকেই মনে করছেন, তাহলে কি ভারতীর মতো নেতা, নেত্রীদের আমন্ত্রণ পত্রকে কাজে লাগিয়ে অভিযুক্তদের কৌশলে মঞ্চের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল রাজ্য বিজেপি?
স্বাভাবিক ভাবেই, ভারতী ঘোষের তোলা প্রশ্নে এবার ঘরে বাইরে অস্বস্তি বাড়ল বিজেপির!