আদালত সূত্রের খবর, সত্যেন্দ্রের ১৪ দিনের হেফাজত চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে সিআইডি। পাল্টা সত্যেন্দ্র তাঁর হয়ে সওয়াল করার জন্য আদালতের কাছে সরকারি আইনজীবী চেয়ে আবেদন করে। আদালত সত্যেন্দ্রের জন্য সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করলে তিনি সত্যেন্দ্রের জামিনের আর্জি জানান আদালতে। সরকারি আইনজীবী সওয়ালে বলেন, সত্যেন্দ্রই যে খুন করেছে, তার কোনও প্রমাণ নেই, খুনের ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই, তাই তাকে জামিন দেওয়া হোক। অন্যদিকে, সিআইডি জবাবে জানায়, কেন দুই ছাত্রকে খুন করা হল? খুনের জন্য কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল? কীভাবে খুনের পরিকল্পনা করা হয়? পাশাপাশি ঘটনাস্থলে সত্যেন্দ্রকে নিয়ে গিয়ে ঘটনাটির পুনর্নির্মাণ করতে অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। দু'পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরির ১৪ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
advertisement
'মাস্টারপ্ল্যান' ছকা হয়ে গিয়েছিল! ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়ানো সত্যেন্দ্র ভেবেছিল, শেষরক্ষা হয়ে যাবে! বাগুইআটি জোড়া খুনের মামলার মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরি ট্রেনের টিকিট কেটে অন্য রাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই পৌঁছেছিল স্টেশনে! সবকিছু চলছিল প্ল্যানমাফিক! মাঝখানে বাঁধ সাধল লোডশেডিং! শেষ মুহূর্তে কারেন্ট চলে যাওয়ায় পুলিশকে ফাঁকি দেওয়ার গরমাগরম পরিকল্পনায় ঠাণ্ডা জল পড়ে গেল! কারেন্টের জন্য অপেক্ষারত সত্যেন্দ্রকে ধরার অনেকটা সময় পেয়ে গেল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে গ্রেফতার হয় বাগুইআটির দুই ছাত্র অতনু দে ও অভিষেক নস্কর খুনে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরি।
পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের পর থেকেই নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছিল সত্যেন্দ্র, সঙ্গে ছিল একাধিক সিম। ইতিমধ্যে টাকাও ফুরিয়ে আসছিল সত্যেন্দ্রর, বিহারে পালিয়ে যাওয়ার ছক কষছিল সে। অন্যদিকে, পুলিশ সত্যেন্দ্রর আত্মীয়দের ফোন ট্যাপ করতে শুরু করে। শুক্রবার টাকার জন্য অন্য সিম ববহার করে এক আত্মীয়কে ফোন করেছিল সত্যেন্দ্র! আর তাতেই তার কাল হল! পুলিশ ফোনের কথোপকথন ও লোকেশন ট্র্যাক করে হাতেনাতে ধরে ফেলল সত্যেন্দ্রকে।
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহের কোনদিন তুমুল বৃষ্টি ধেয়ে আসছে কলকাতায়? জানাল আবহাওয়া দফতর
সত্যেন্দ্রর মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন দেখায় হাওড়া স্টেশন। বিধাননগর কমিশনারেটের টিম পৌঁছে যায় স্টেশন চত্বরে। সেখানে এক ট্র্যাভেল এজেন্সির অফিসের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরীকে ৷ সবার সামনে ফাঁসি চাই- দাবি মৃত ছাত্রদের পরিবারের৷
কে এই সত্যেন্দ্র চৌধুরী? মৃত ছাত্র অতনু দে-র পরিবারের তরফে অভিযোগ, পুরো ষড়যন্ত্রের মূল পান্ডা সত্যেন্দ্র। অভিযোগ, এই সত্যেন্দ্রই ২২ আগস্ট দুই পড়ুয়াকে মোটর বাইক কেনানোর নাম করে নিয়ে যায় এবং অতনু দে এবং অভিষেক নস্করকে শ্বাস রোধ করে খুন করে। কিন্তু পুরো ঘটনা এখন পুলিশের কাছে পরিষ্কার হওয়ার পরেও বহুদিন পুলিশ নাগাল পায়নি খুনের মাস্টার মাইন্ডের৷ সেই নিয়েই এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভে ফুঁসছিলেন।
গত ২২ অগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিল বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ওই দুই ছাত্র। গত ২৫ অগস্ট হাড়োয়া থানার কুলটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নয়ানজুলি থেকে উদ্ধার করা হয় অভিষেকের দেহ। এর আগে, গত ২৩ অগস্ট ন্যাজাট থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয় অতনুর দেহ। ১০-১২ দিন দেহ মর্গে থাকার পরও পুলিশ জানতে পারেনি বলে অভিযোগ। গত ৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়।