শনিবার সকালে নিজাম প্যালেস থেকে আলিপুর কমান্ড হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়া হয় অনুব্রত মণ্ডলকে। সেখান থেকে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতিকে পেশ করা হয় আসানসোল আদালতে। গরু পাচার-কাণ্ডে আসানসোল আদালতে অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিনের আর্জি জানান। সিবিআই কাস্টডি-র বিরোধীতা করে তিনি জানান '' অনুব্রত মণ্ডলের শারীরিক পরিস্থিতি ভাল নয়, ওঁর বিভিন্ন রোগ আছে, সেই কারণেই উনি হাজিরা দিতে যেতে পারেনি। 'হেলথ কন্ডিশন গ্রাউন্ড'-টা বিবেচনা করা হোক! আমাদের তরফে সমস্ত মেডিক্যাল ডকুমেন্টস-ও সিবিআই-এর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।'' তিনি আরও বলেন, '' এমন নয় যে হালে অসুস্থ হয়েছেন, বহুবছর ধরেই অনুব্রতর শারীরিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। আমরা সিএমআরআই রিপোর্ট-ও জমা দিয়েছি।''
advertisement
আসানসোলে সিবিআই-এর বিশেষ আদালতে অনুব্রত-মামলা শুনানিতে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, '' সিবিআই ৮ ফেব্রুয়ারি হাজিরার নোটিশ পাঠায়, আমি বললাম, অসুস্থতার কারণে যেতে পারিনি, সেদিনই আবার সিবিআই নোটিস দিল ১০ তারিখ আসতে হবে। আমি তো পালিয়ে যাইনি বাড়ি থেকে, আমি পলাতক ছিলাম না।'' তাঁর কাতর আর্তি, '' শরীর বরাবর অসুস্থ। কাল জ্বর ছিল। কাশি।’’ বিচারক বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের বলেছিলাম, তাঁরা আপনাকে দেখছেন তো?’’ অনুব্রতের জবাব, ‘‘ওষুধ খাচ্ছি।’’ শুনে বিচারক বলেন, ‘‘অসুবিধা হলে চিকিৎসককে বলতে দ্বিধা বোধ করবেন না।’’ বিচারকের কথার প্রেক্ষিতে অনুব্রত বলেন, ‘‘আচ্ছা’’।
অনুব্রতর সাফাইয়ে বিচারক পালটা প্রশ্ন করেন, '' কতবার কলকাতা গিয়েছিলেন?'' অনুব্রতর আইনজীবীর উত্তর '' চিকিৎসার জন্য একবার কলকাতায় গিয়েছিলেন।'' আদালতে অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘সিবিআই-কে বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা মেল মারফৎ জানানো হয়েছিল, কিন্তু সিবিআই নিরুত্তর ছিল। পরের দিন আবার নোটিস পাঠানো হয়। চিকিৎসক বলেছিলেন, অনুব্রতর ১৪ দিনের বিশ্রাম প্রয়োজন। সেই মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়, কিন্তু সিবিআই কর্ণপাত করেনি। অনুব্রত পলাতক ছিলেন না, উনি কখনওই সিবিআইকে এড়াননি। একবার উনি সুস্থ ছিলেন, সে সময় নিজেই সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন।’’
এদিন আদালতে অনুব্রত-মামলা শুনানিতে চালকল বিতর্ক প্রসঙ্গে অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘বহু বছর আগে রাইস মিল ওঁর শ্বশুর ওঁকে উপহার হিসাবে দিয়েছেন।’’ আইনজীবীর দাবি, ‘‘যথেষ্ট সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবুও অসহযোগিতার অভিযোগ উঠছে।’’ অন্যদিকে, সিবিআই-এর আইনজীবীর দাবি, অনুব্রত মণ্ডলকে আরও জেরার প্রয়োজন রয়েছে। আরও চার দিনের হেফাজতের আবেদন জানায় সিবিআই।
আরও পড়ুন: ভিনরাজ্যেও পার্থর সম্পত্তির হদিস! হাজারিবাগের হোটেলে বোঝাই পার্থর বিপুল অঙ্কের টাকা
সিবিআই-এর আইনজীবীর দাবি, '' অনুব্রত মণ্ডল প্রভাবশালী ব্যক্তি। এর আগে বহুবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অভিযুক্ত চিকিৎসককে চাপ দিয়ে মেডিক্যাল রিপোর্ট লিখিয়ে নিয়েছেন। উনি সাধারণ অভিযুক্ত নন। সায়েগল হোশেন, এনামুল হক সবাই আছে...এটা সিঙ্গল চেন নয়... এটা পিছনে বড় ষড়যন্ত্র আছে...! অনুব্রতর বড় ভূমিকা রয়েছে গরু পাচারে, ওঁকে সিবিআই কাস্টডিতে নেওয়া দরকার।''
আরও পড়ুন: সমর্থকদের বলব, যেখানে সুকান্ত যাবেন, সেখানেই বিক্ষোভ দেখাতে, বললেন সৌগত রায়
সিবিআই-এর আরও দাবি, অনুব্রতের দেহরক্ষী সহগল হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ ছিল গরু পাচার-কাণ্ডে ধৃত এনামূল হকের। কিন্তু এই অভিযোগের কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে পালটা জানান অনুব্রতের আইনজীবী।
এদিন সকালে কম্যান্ড হাসপাতাল থেকে বেরনোর সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে অনুব্রত দাবি করেন, ‘‘আমার কোনও বেনামি সম্পত্তি নেই।’’ সেই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেন, ‘‘আমি তদন্তে সহযোগিতা করছি।’’