গেরুয়া শিবিরের মতে, সৌমিত্রর ট্র্যাক রেকর্ডই তার কারণ। একটু সবিস্তারে বললে মনে পড়বে সকলেরই, নানা সময়ে '' বিদ্রোহী " সৌমিত্র' র নানা কাহিনী। কখনও তিনি যুব মোর্চার কমিটি নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কামান দাগছেন। কখনও আচমকা দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে লেফট করেছেন। আবার, কখনও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলত্যাগের হুমকি দিয়ে আবার নরমে গরমে বিবাদ মিটিয়ে যোগ দিয়েছেন দলীয় কর্মসূচিতে।
advertisement
মুকুল রায়ের হাত ধরে ঘাসফুল শিবির ছেড়ে পদ্ম শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন সৌমিত্র। বিজেপিতে দলবদলু তৃণমূলিদের মধ্যে বয়সে নবীন হলেও বীরভূমের সাংসদ অনুপম হাজরা আর সৌমিত্র খাঁই সবচেয়ে প্রবীণ। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে লড়াই করে বিষ্ণুপুর থেকে জয়ী হয়ে সৌমিত্র সাংসদ হলেও, অনুপমের ভাগ্যে সে শিকেটাও ছেঁড়েনি। কিন্তু, সৌমিত্র দলের যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির মত গুরুত্বপূর্ণ পদে পেয়েছেন। তার সময়েই লালবাজার অভিযানের মতো অভিযান করে দল ও মোর্চাকে সাফল্য এনে দিলেও, কেন্দ্রে মন্ত্রী হতে পারেননি।
কোন রকম রাখঢাক না করেই, তা নিয়ে আক্ষেপ চেপেও রাখেননি সৌমিত্র। কিন্তু, এবার একটু অন্যরকম। সৌমিত্র কোথাও কোন বিদ্রোহে নেই। বরং, অর্জুন ইস্যুতে তিনি নরমে গরমে ব্যারাকপুরের সাংসদকে বিঁধে মন্তব্য করেছেন, অর্জুন সিং এর রাজনৈতিক মৃত্যু হল। তারপরেও, কী আশ্চর্য! দলে, দলের বাইরে ঘরওয়াপসি হওয়ার জল্পনায় তিনিই মধ্যমণি।
সৌমিত্র ঘনিষ্ঠ রসিকরা বলছেন, আসলে এও এক ধরনের '' খেলা হবে "।
কিন্তু, তাতে কী? বিজেপির নেতৃত্ব কোন অশনি সংকেত পেলেন সৌমিত্রর আচরণে? না হলে তড়িঘড়ি এয়ারপোর্ট সংলগ্ন নিরিবিলি পাঁচতারা হোটেলে-র ১৪ তলায় সৌমিত্রকে ডেকে একান্তে কথা বলতে হল, বিরোধীদল নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। সুকান্ত, শুভেন্দুরা নিশ্চয় কোন লক্ষণ দেখেছিলেন সৌমিত্রর সাম্প্রতিক আচরণে। কিংবা, প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বা অর্জুন সিং-এর মত সাংসদদের দলত্যাগের পর আর কোন ঝুঁকি নিতে চাননি তারা।
আরও পড়ুন: কেন বেছে নিলেন 'আত্মহত্যার' পথ? মডেল বিদিশার সুইসাইড নোটে ভয়ঙ্কর তথ্য
যাইহোক, বুধবারের ওই গোপন বৈঠকের পর, সৌমিত্র কিন্তু আবার তার পুরনো ফর্মে। আজ রাজ্য দফতরে দলীয় এক অনুষ্ঠানের পর, মমতা আর অভিষেকের বিরুদ্ধে আবারও সুর চড়িয়েছেন সৌমিত্র। নিন্দুকেরা বলছে, একান্ত আলোচনায় বিজেপি নেতৃত্ব সৌমিত্রকে দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা করার টোপ দিয়েছেন। আর, অঙ্ক কষে নাকি বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই মূহুর্তে তার পক্ষে বিজেপির সাংসদ পদ ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখানো কোন রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় হবে না।
আরও পড়ুন: ২০৩০ সালের মধ্যে দূষণ মুক্ত হবে কলকাতা! বিরাট আয়োজনের সূচনা ফিরহাদের
সৌমিত্রর দোলাচল কাটাতে তাকে নিয়ে তার সাংসদীয় এলাকাতে গিয়ে একসঙ্গে মিছিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটা শুভেন্দুর এক ঢিলো দুই পাখি মারার কৌশল। দলের অন্দরে তাকে নিয়ে জল্পনায় জল ঢালা আর তৃণমূলকে বার্তা দেওয়া। তবে, বিজেপির এই চালে সৌমিত্র পাল্টা কী চাল দেবেন, সেটা তিনিই জানেন। কিন্তু, সৌমিত্রকে যারা অল্পবিস্তর চেনেন, তারা বলছেন, সৌমিত্র জল মাপতে শুরু করেছেন। সৌমিত্র বুঝে গেছেন, দাবার চালে কিস্তি দেওয়ার এটাই সময়। দল যখন তাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ধরে রাখার জন্য তাকে গুরুত্ব দিতে চাইছে, সেই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।