পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তির আশঙ্কাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বিরোধীরা৷ অনেক টানাপোড়েনের পর সেই কেন্দ্রীয় বাহিনী এল বটে, কিন্তু ভোটের আগে সর্বত্র সেই বাহিনী পৌঁছেছিল কি না, তার উত্তর হয়তো আজও খুঁজে চলেছেন বিরোধী শিবিরের অনেক নেতা৷ বেসরকারি মতে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এ রাজ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা কমবেশি ৫০ ছিল৷ সরকারি মতে অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই সংখ্যাটা অনেক কম৷ ভোটকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ক্যানিং, ভাঙড় অথবা মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় যেভাবে বোমা, গুলি চলেছে, তা রাজ্যবাসীকে পাঁচ বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটের হিংসার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে৷
advertisement
তবে ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোটের প্রাপ্তি বলতে হয়তো একটাই৷ রাজ্যের বহু জায়গাতেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে মানুষের জোট৷ রাজনৈতিক রং ভুলেই শাসকের বিরুদ্ধে অলিখিত জোট তৈরি করেছে বিরোধীরা৷ আর যেখানে যেখানে প্রতিরোধ হয়েছে, সেখানেই বেড়েছে সংঘর্ষ, সংঘাত৷ তাতেও অবশ্য তৃণমূলের একপেশে জয় আটকানো যায়নি৷ হাতেগোনা যে এলাকাগুলিতে বিরোধীরা তুলনামূলক ভাবে শক্তিশালী, সেখানেো একপেশে কর্তৃত্ব জাহির করেছে রাজ্যের শাসক দল৷ যা দেখে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই প্রশ্ন তুলেছেন, সর্বগ্রাসী এই মনোভাব না দেখালে, কিছু আসন কম পেলেও কি শাসকের জয়ের গরিমা বাড়ত বই কমে যেত? শাসক দল অবশ্য অতীতের পরিসংখ্যান টেনে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, অতীতের পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় এবারের ভোটে হিংসায় মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম৷
আরও পড়ুন: উদ্ভাবনী চিন্তার জোরে সেরা ব্যবসায়ী তাঁরা; দেখে নিন ২০২৩ সালের সেরা দশের তালিকা
নিছক তথ্য পরিসংখ্যানের নিরিখে দেখলে, রাজ্যের ২০টি জেলা পরিষদই দখল করে নেয় তৃণমূল৷ উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র জেলা পরিষদের ভোট জয়ী হয় তৃণমূল৷ বহু জেলা পরিষদ তো বিরোধী শূন্য হয়ে যায়৷ ঠিক যেমনটা হয়েছিল পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে৷ ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবমিলিয়ে তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ৩৫,৫২০টি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল৷ সেখানে বাম, কংগ্রেস, বিজেপি সম্মিলিত ভাবেও তৃণমূলের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি৷ পঞ্চায়েত সমিটির নির্বাচনেও ৬৬৬২৫টি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল৷ বিজেপি-র প্রাপ্তি ১০৩৬টি আসন, বামেদের ১৯৬টি আসন এবং কংগ্রেস জয়ী হয় ২৭২টি আসনে৷
এ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হবে অথচ রক্তারক্তি, প্রাণহানি হবে না, ২০২৩-ও সেই চেনা ছবি বদলাতে ব্যর্থ৷ ভোট, ক্ষমতার কাছে এ বছরও আত্মসমর্পণ করতে হল জীবনের মূল্যকে৷ ফলে আবারও অন্তত পাঁচ বছরের অপেক্ষা৷ আশায় চাষার বুক বাঁধার মতোই গ্রাম বাংলাও ভাবতে থাকুক, আবার হয়তো বছর পাঁচেক পর বাংলায় শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত ভোট হবে৷
