তখন তিনি বছর সাতাশের টগবগে তরুণ। দাদা সদাশিব চক্রবর্তী ও কাকা সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তীকে সঙ্গী করে ভবানীপুরের নীল কুঠির বাড়ি থেকে বেরিয়ে পায়ে পায়ে ঘুরে ছিলেন গোটা কলকাতা। সাক্ষী থেকেছিলেন স্বাধীনতার প্রথম রাত উদযাপনের। সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিতেই বেহালার বাড়িতে বসে শতায়ু হরপদ চক্রবর্তী বলছিলেন,"এতগুলো বছর বাদেও ওই দিনটার স্মৃতি স্পষ্ট। কলকাতার রাস্তায় সেদিন লক্ষ লক্ষ লোক। আমি তখন থাকতাম ভবানীপুরের নীলকুঠির পাশে। ২৩/৩/২এ রূপনারায়ণ নন্দ লেনে। দাদা আর কাকাকে সঙ্গী করে সেদিন চষে বেরিয়েছিলাম পুরো কলকাতা। এখনও মনে পড়ে সেই দিন আলোয় সেজেছিল রাজভবন। রঙিন আলোয় সাজানো হয়েছিল এসপ্ল্যানেডের হোয়াইট ওয়ে লেন ল। সেখানে তখন মেট্রোপলিটনের অফিস চলত। ধর্মতলা রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ। সব লোকে লোকারণ্য। সবাই একসঙ্গে আনন্দে চিৎকার করছে। কেউ বাধা দিচ্ছে না। মুহুর্মুহু বন্দেমাতরম স্লোগান উঠছে। এমন দিন জীবনে একবারই আসে! ভোলা যায় না কী স্বাধীনতার প্রথম রাত!"
advertisement
বয়স ১০০ বছর ৮ মাস। শতায়ু হরপদ চক্রবর্তী আজও টানটান ভাবে ঘুরে বেড়ান বাড়ির উঠোন থেকে দুর্গা মন্দির। নিমেষে পড়ে ফেলেন ভগবত্ গীতা থেকে নেতাজি। ভবানীপুরের তৎকালীন রূপ নারায়ণ নন্দ লেনের তরুণ সম্প্রদায়-এ প্রায়ই আসতেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শরৎ বসু, লক্ষণ ভট্টাচার্যের মত দেশ স্বাধীনের কারিগররা। সেদিনের কথা মনে করে শতায়ু বলছিলেন,"নীল কুঠির কাছে ছিল তরুণ সম্প্রদায়। দেশ সেবা, কুস্তির আখড়া, যাই বলুন না কেন! নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, তাঁর দাদা শরৎ বোস কত বার যে এসেছেন সেখানে! কত বার নেতাজির ভাষণ শুনেছি! ওখানে লক্ষ্মণ ভট্টাচার্য, তুষার বোস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মত ব্যক্তিত্বরাও আসা-যাওয়া করতেন তরুণ সম্প্রদায়ে।"
স্বাধীনতার মহানায়কদের খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা বলতে বলতেই গলা কেঁপে ওঠে শতায়ু বৃদ্ধের। চোখ বন্ধ করলে আজও দেখতে পান বন্দেমাতরম গান গাওয়ার অপরাধেই কাকা হরিপদ চক্রবর্তীকে করা ব্রিটিশ সেনাদের নির্মম বেত্রাঘাতের ছবি। কোভিডের চোখরাঙানির মাঝেই দেশের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস। উঁচা রহে তেরঙ্গা হামারা। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন শতায়ু হরপদ চক্রবর্তীরা। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জীবন্ত দলিল হয়ে।
PARADIP GHOSH