মূলত, গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষক বদলির জন্য একাধিক স্কুলে বদলি প্রক্রিয়া হয়েছে। তার জেরে বিভিন্ন স্কুলে থাকা শূন্যপদে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় যে শূন্যপদের তালিকা ছিল সেই তালিকায় হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই ফের নতুন করে শূন্যপদের রোস্টার চাওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে।
advertisement
সাম্প্রতিক সময়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। গত আট বছর ধরে উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এবার হাইকোর্টের কাছে মেধা তালিকা জমা দেবে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু উচ্চ প্রাথমিকের শূন্যপদ নিয়ে যাতে কোনও বিতর্ক বা অস্বস্তি না হয় তার জন্যইও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে৷ সেজন্যই স্কুলগুলি থেকে ফের তথ্য চাওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনা বিধি না মানলে বন্ধ ভারত জোড়ো যাত্রা! রাহুল গান্ধিকে চিঠি স্বাস্থ্য় মন্ত্রী মাণ্ডব্য়র
অন্যদিকে ২০১৪ থেকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এই অভিযোগে উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের দাবি নিয়েই ধর্মতলার মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির সামনে লাগাতার অবস্থানে উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। অবস্থান বিক্ষোভের ২০ দিন পার হয়ে গিয়েছে। উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত শেষের দিকে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে মেধাতালিকা জমা করার নির্দেশ হাইকোর্ট দিলেও এখনো পর্যন্ত মেধাতালিকা জমা করতে পারেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেক্ষেত্রে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা।
যদিও স্কুল সার্ভিস কমিশনের বক্তব্য চলতি মাসের শেষের দিকে হাইকোর্টে মেধা তালিকা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎকে প্রশ্ন তুলেই লাগাতার অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের তরফে সুশান্ত ঘোষ বলেন, "ধর্মতলায় মাতঙ্গিনী হাজরার পাদদেশে অনির্দিষ্টকালীন ধারাবাহিক অবস্থান সমাবেশ শুরু করা হয়েছে আমাদের তরফে। আমরা দাবি করেছি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে উচ্চ প্রাথমিকে মেধাতালিকা প্রকাশ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।" উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগের জন্য প্রথম নির্দেশিকা জারি হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে।
মূলত টেট নেওয়ার জন্য এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে। তারপর উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগের জন্য প্রথম দফায় ইন্টারভিউ নেওয়া হয় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। সেই মেধাতালিকা প্রকাশ করা হলেও অস্বচ্ছতা ও গরমিলের অভিযোগে বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। দ্বিতীয় দফায় গতবছরের ১৯ জুলাই থেকে ৪ অগাস্ট পর্যন্ত ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া নেওয়া হয়। যদিও এই ইন্টারভিউতে ডাক না পাওয়া অভিযোগকারী প্রার্থীদের আলাদা করে গ্রিভেন্স জানানোরও ব্যবস্থা করা হয়। গিভেন্স জানানো প্রার্থীদের মধ্যে থেকে বিবেচনা করে ১৫৮৫ জন প্রার্থীদের ফের ইন্টারভিউ নেয় এসএসসি।
ইতিমধ্যেই ইন্টারভিউ-সহ গোটা প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলেছে এসএসসি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আদালতে উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগের মেধাতালিকা জমা দিতে পারেনি। ১৪ হাজারেরও বেশি শূন্যপদ রয়েছে উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে। তবে নিয়োগে বেশ সময় লাগবে বলেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে। যা নিয়ে চাকরি প্রার্থীরা এবার অবস্থান বিক্ষোভের পাশাপাশি আন্দোলনেরও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আপাতত মেধা তালিকা হাইকোর্টের জমা দিতে পারছে না সম্প্রতি তা জানিয়েছেন এসএসসি চেয়ারম্যান। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে মেধাতালিকা জমা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলেই জানানো হয়েছে। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হতে যে আরও কিছুটা সময় লাগতে চলেছে তা কার্যত নিশ্চিত এসএসসির বক্তব্যে।
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়