শাহবাজের উপর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। তাকে দুর্বল নেতা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ও আলোচনায় রয়েছে। সেনাবাহিনী তার কথা শুনছে না। মিডিয়া এবং রাজনৈতিক বিরোধীরা শাহবাজ শরীফের অবস্থানকে দুর্বল হিসাবে দেখছে এবং ক্রমাগত তার নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তিনি তিনবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন। পাকিস্তানের মিডিয়া বহু মহিলার সঙ্গে তাঁর নাম প্রকাশ্যে এনেছে।
advertisement
শাহবাজের বর্তমান বয়স ৭৩ বছর। তার বড় ভাই নওয়াজ শরিফও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দু’জনের স্বভাবের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য একটাই, নওয়াজ একবারই বিয়ে করেছিলেন। শাহবাজ তাঁর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে করা ছাড়াও তিনি দু’বার আনুষ্ঠানিক বিবাহ করেছিলেন। এমনকি তার নিজের পরিবারের সদস্যরাও তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
নুসরত বাটের সঙ্গে প্রথম বিয়ে
১৯৭৩ সালে খুড়তুতো বোন নুসরত বাটকে বিয়ে করেন শাহবাজ শরিফ। তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর। মেয়েটিকে শাহবাজের বাবা এবং পরিবারের সদস্যরা পছন্দ করেন। নুসরত-শাহবাজের চার সন্তান, দুই ছেলে ও দুই যমজ মেয়ে। যদিও নুসরতের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে যায় ১৯৯৩ সালে।
মডেল আলিয়া হানির সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে
শাহবাজ পাকিস্তানে রোম্যান্টিক রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তানের মডেল আলিয়া হানির সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। শাহবাজের বাবা মিয়া শরিফ এই বিয়ে নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন। বিয়ে হয় ১৯৯৩ সালে, তখন আলিয়া ছিলেন তরুণী, সুন্দরী মডেল। শাহবাজের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা হত তাঁর, এরপর গোপনে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর শাহবাজ পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন। আলিয়ার বাড়িতে যাওয়ার জন্য তিনি কাভালরি নামে একটি নতুন সেতু তৈরি করেছিলেন। সেতুটির নাম দেওয়া হয় মধু সেতু। বলা হয়, এই নামের পেছনে তাঁর হাত রয়েছে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থানের পর শাহবাজ সৌদি আরব গিয়েছিলেন। আলিয়াও তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন, পরে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। কয়েক মাস পর সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে আলিয়ার মৃত্যু হয়।
নার্গিস খোসার সঙ্গে তৃতীয় বিয়ে
শাহবাজের তৃতীয় বিয়ে নার্গিস খোসার সঙ্গে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। নার্গিস পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির মহাপরিচালক তারিক খোসার বোন। কিন্তু সম্ভ্রান্ত পরিবার এই বিয়েতে মোটেও রাজি ছিল না। শুরুটা হয়েছিল খুব গোপনে, শেষও হয় খুব গোপনে।
তেহমিনা দুররানির সঙ্গে চতুর্থ বিয়ে
২০০৩ সালে তিনি গোপনে তেহমিনা দুররানিকে বিয়ে করেন, যিনি মাই ফিউডাল লর্ড বইটি লেখেন। এরপর তিনি পাকিস্তানে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। কথিত আছে, প্রায় ৮ বছর ধরে তাঁদের প্রেম চলে। এরপরই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তবে তিনি যখন বিয়ে করেন, তখন তার পরিবারের সদস্য বা দলের নেতাদের কাছে এ বিষয়ে কোনও তথ্য ছিল না। সেই কারণেই বিয়ের কিছুদিন পরেই দুবাইয়ে একটি গ্র্যান্ড পার্টি হয়, তখন তাঁর দলের নেতারাও বলেছিলেন শাহবাজের গোপন জীবনের কথা কেউ জানত না।
তেহমিনা সঙ্গে অদ্ভুত প্রেম
তেহমিনা শাহবাজের বর্তমান স্ত্রী। তিনিই পাকিস্তানের ‘ফার্স্ট লেডি’। তেহমিনার বাবা শাকুরউল্লাহ দুররানি ছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের গভর্নর। পরে তিনি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের প্রধান হন। তেহমিনা বিরাট জমিদার পরিবারের সন্তান। আড়ম্বর আর সম্পদের মধ্যে বড় হয়েছেন তিনি।
১৭ বছর বয়সে আনিস খান নামের এক যুবকের প্রেমে পড়েন তেহমিনা। পরিবারের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিয়ে করেন। প্রথমপক্ষের এক কন্যা সন্তান রয়েছে তাঁর। বিয়ের কয়েক বছর পর আনিস খানের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁর। পরে তিনি পঞ্জাবের বিশিষ্ট নেতা গুলাম মুস্তাফা খারকে বিয়ে করেন। এই বিয়ের আগেও বেশ কয়েকবার বিয়ে করেছিলেন গুলাম। দ্বিতীয় বিয়েতে তেহমিনার চার সন্তান রয়েছে। এই বিয়ে ১৪ বছর টিকেছিল, কিন্তু তিনি তার বইয়ে লিখেছেন কীভাবে মুস্তাফা তাঁকে নির্যাতন করতেন। অন্য নারীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সেই সময় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এই কারণে তিনি প্রথমে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন এবং পরে রাজ্যপাল।
‘আমার সামন্ত প্রভু’ বই পাকিস্তানে আলোড়ন সৃষ্টি করে
‘মাই ফিউডাল লর্ড’ নামে একটি জীবনী বই লিখে তেহমিনা পাকিস্তানের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের ভূস্বামী পটভূমি থেকে উন্মোচন করেছেন। লিখেছেন তাদের অবৈধ সম্পর্কের কথা। তিনি আরও লিখেছেন যে কীভাবে মুস্তাফা তার স্বামী হওয়া সত্ত্বেও ভুট্টোর কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার চেষ্টা করেছিলেন। বইটিতে ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি’র প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টোর বাবার কড়া সমালোচনা করেছে তেহমিনা।
বইটি ৮ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত এই বইটি প্রথম পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করা হয়। এখন সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তেহমিনার পরিবারের সদস্যরা বইটি নিয়ে এতটাই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে তাঁরা লেখিকার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
শাহবাজের বিয়ে এখনও মেনে নেননি বড় ভাই নওয়াজ শরিফ
শাহবাজের বিয়ের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন বড় ভাই নওয়াজ শরিফ। তিনি তেহমিনাকে তাদের পরিবারে প্রবেশ করতে এবং তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে নিষেধ করেছিলেন। নওয়াজ স্পষ্ট বলেছিলেন, তেহমিনাকে লাহোরে শরিফ পরিবারের বাড়িতে রাখা উচিত। একই সঙ্গে নওয়াজের প্রকাশ্যে সমালোচনা করতেও কোনও দ্বিধা করেননি তেহমিনা। কিন্তু জীবনের অদ্ভুত বাঁক পেরিয়ে তিনি এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের স্ত্রী, যিনি কিছুদিন আগেও দেশের ফার্স্ট লেডি ছিলেন। নওয়াজ শরিফের সঙ্গেও তার সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
পঞ্চম বিয়েটিও গোপনীয়, তাড়াতাড়ি বিবাহবিচ্ছেদ
শাহবাজের কুলসুম নামের এক নারীর সঙ্গেও দেখা হয়েছে বলে জানা যায়। কুলসুম একজন সরকারি কর্মকর্তা। ২০১২ সালে গোপনে তাঁকে বিয়ে করেন শাহবাজ, তাঁকে তালাকও দিয়ে দেন।