মাত্র ৩৯ বছর বয়সে দায়িত্ব পেলে গর হবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সি রাষ্ট্রদূত। তিনি এরিক গারসেট্টির জায়গায় আসবেন, যিনি জো বাইডেন আমলে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বাইডেন ক্ষমতা ছাড়ার পর গারসেট্টি ফিরে গিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। যদিও ট্রাম্প সার্জিও গর-কে নিয়ে প্রশংসার শেষ করেন না, তাঁকে ঘিরে আমেরিকায় বিতর্কও কম নয়।
কে এই সার্জিও গর?
advertisement
সার্জিও গর-এর জন্ম তাশখন্দে, উজবেকিস্তানের রাজধানী শহরে। তবে জন্মের সময় তাশখন্দ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। তাঁর আসল নাম সের্গেই গরখোভস্কি। ১৯৯৯ সালে, মাত্র ১২ বছর বয়সে, তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে আমেরিকায় চলে আসেন। এর আগে শৈশবে পরিবার মাল্টাতেও কয়েক বছর বসবাস করেছিল।
২৫০ কোটির প্রাসাদ! গুঁড়িয়ে দিল বুলডোজার… ধংসস্তূপে মিলল ‘গভীর জলের মাছ’! কে জানেন?
রেলযাত্রীদের জন্য সুখবর! ২২ অগাস্ট থেকে চালু হচ্ছে নতুন লোকাল ট্রেন! কোন রুটে দেখে নিন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আস্থাভাজন সার্জিও গর হচ্ছেন ভারতের মার্কিন রাষ্ট্রদূত
তাঁর বাবা ইউরি গরাখোভস্কি ছিলেন সোভিয়েত সামরিক বিমান ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার, যিনি IL-76-এর মতো যুদ্ধবিমানে কাজ করেছিলেন—যা এখনও ভারতীয় বায়ুসেনায় রয়েছে। তাঁর মা ইজরায়েলি বংশোদ্ভূত। আমেরিকায় এসে পরিবার লস অ্যাঞ্জেলেসে বসতি গড়ে তোলে। সেখানেই স্কুলের পড়াশোনা, পরে উচ্চশিক্ষা জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে—যা হোয়াইট হাউস থেকে কয়েক ব্লক দূরে।
রিপাবলিকান রাজনীতিতে কৈশোর থেকেই যুক্ত ছিলেন গর। শুরুতে তিনি মার্কিন আইনপ্রণেতা স্টিভ কিং এবং মিশেল বাচম্যানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচার দলে যোগ দেন এবং দ্রুতই MAGA (Make America Great Again) আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে ওঠেন। ২০২৪ সালে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর তাঁকে হোয়াইট হাউস প্রেসিডেন্সিয়াল পার্সোনেল ডিরেক্টর করা হয়।
রাশিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ
তাঁকে ঘিরে সবচেয়ে বড় বিতর্ক হল রাশিয়ার গুপ্তচর হওয়ার অভিযোগ। সম্প্রতি টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেন। নাসা-সংক্রান্ত বিষয়ে অসদাচরণ এবং জন্মস্থান নিয়ে মিথ্যা বলার অভিযোগও ওঠে। মাস্ক এমনকি তাঁকে ‘সাপ’ বলেও আক্রমণ করেন।
গর দীর্ঘদিন দাবি করেছিলেন যে তিনি মাল্টায় জন্মেছেন, কিন্তু পরে জানা যায় তাঁর জন্ম আসলে উজবেকিস্তানে। এর থেকেই অনেকে তাঁকে ‘রাশিয়ান স্পাই’ বলতে শুরু করে। তবে গর-এর আইনজীবী জানিয়ে দেন—এই অভিযোগগুলি ‘নিরর্থক’ ও ‘দুরভিসন্ধিমূলক’, এবং কোনও প্রমাণ মেলেনি।
ট্রাম্পের ভরসার মানুষ
ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তাঁকে প্রশংসা করে লেখেন—
“সার্জিও বহু বছরের বন্ধু। তিনি আমার ঐতিহাসিক নির্বাচনী প্রচারে কাজ করেছেন, আমার বেস্টসেলার বই প্রকাশ করেছেন এবং আমাদের আন্দোলনকে সমর্থনকারী সবচেয়ে বড় সুপার প্যাকগুলির একটি চালিয়েছেন। তিনি রেকর্ড সময়ে প্রায় ৪,০০০ জন ‘আমেরিকা ফার্স্ট দেশপ্রেমিক’-কে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ করেছেন।”
ট্রাম্পের মতে, এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চলে তাঁর কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য গর-এর নিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
নিয়োগ নিয়ে গর-এর প্রতিক্রিয়া
নিজের নিয়োগ নিয়ে সার্জিও গর বলেন—
“রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প আমার ওপর ভরসা রেখেছেন, এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমেরিকান জনগণের সেবা করার চেয়ে বড় সাফল্য আর হতে পারে না। ভারতের রাষ্ট্রদূত হওয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূতের দায়িত্ব পাওয়া হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও-ও গর-এর নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন—
“ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলির মধ্যে একটি। আমি নিশ্চিত, সার্জিও গর এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবেন।”