‘ইউকে হেলথ প্রোটেকশন এজেন্সি’ (UKSHA)-এর তরফে COVID ভ্যারিয়েন্টের নতুন ব্রিফিং ডকুমেন্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৪ অগাস্ট থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহে, সে দেশে সংক্রমণের জন্য BA.4.6 ভ্যারিয়েন্ট দায়ী ছিল মাত্র ৩.৩ শতাংশ ক্ষেত্রে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে যুক্তরাজ্যের (UK) মোট কোভিড সংক্রমণের মধ্যে প্রায় ৯ শতাংশের পিছনেই রয়েছে BA.4.6 ভ্যারিয়েন্টটি।
advertisement
আরও পড়ুন- কোভিড কাটিয়ে পুজোয় মাতছেন প্রবাসী বাঙালিরা, কানাডার পুজোও এবার জমজমাট
একই ভাবে, ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (CDCP) জানিয়েছে, এখন সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (US) জুড়ে যত কোভিড সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে তার ৯ শতাংশেরও বেশি সংক্রমণের জন্য দায়ী BA.4.6। বিশ্বের অন্য দেশেও এই নতুন রূপের ভাইরাসটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন হল উৎসব মরশুম শুরুর আগে ভারতেও কি BA.4.6 ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য—
BA.4.6 হল ওমিক্রন (Omicron)-এর BA.4 ভ্যারিয়েন্টের একটি বৈকল্পিক রূপ। BA.4 প্রথম ভ্যারিয়েন্টটিকে প্রথম চিহ্নিত করা গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে। তারপর থেকে BA.5 ভ্যারিয়েন্ট সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসের নতুন এই প্রতিরূপটি ঠিক কী ভাবে আবির্ভূত হয়েছিল তা এখনও সম্পূর্ণ ভাবে জানা যায়নি। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এটি একটি পুনঃসংযোজক (Recombination) বৈকল্পিক রূপ হতে পারে। কোনও ব্যক্তির শরীরে কোভিড ১৯ রোগের জন্য দায়ী SARS-CoV-2 ভাইরাসের দু’টি ভ্যারিয়েন্ট যদি একই সময় একই ব্যক্তির শরীরে সংক্রমিত হয়, তা হলেই এই পুনর্সংযোজিত রূপের উদ্ভব ঘটতে পারে।
যদিও BA.4.6 অনেকটা BA.4 এর মতোই হবে বলে মনে করা হয়। এটি স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন বহন করে, ভাইরাসের পৃষ্ঠদেশে একটি প্রোটিন থাকে যা এটিকে আমাদের কোষে প্রবেশ করতে দেয়। এই মিউটেশন, R346T, অন্য রূপগুলিতে দেখা গিয়েছে। এটি ভাইরাসকে ব্যক্তির অনাক্রম্যতা (Immunity) থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ টিকা নেওয়ার ফলে কিংবা একবার সংক্রমিত হওয়ার পর প্রাপ্ত অ্যান্টিবডিগুলি সহজেই এড়িয়ে যেতে পারে এই ভাইরাস।
তীব্রতা, সংক্রামকতা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা—
ভাগ্যক্রমে ওমিক্রনের মারণ ক্ষমতা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু ওমিক্রনের উপ-প্রজাতিগুলি (Sub-Variant) মারাত্মক সংক্রামক, অর্থাৎ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। BA.4.6 শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমন করে। UKHSA-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, BA.5 ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে তুলনা করে দেখলে BA.4.6 তার প্রারম্ভিক সময়ের মধ্যে অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
অন্য দিকে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির (Oxford University) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাঁরা কোভিডের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য ফাইজার (Pfizer) ডোজ গ্রহণ করেছেন, তাঁদের অ্যান্টিবডিগুলি BA.4.6-এর উপর প্রভাব ফেলে না। এটি অবশ্যই চিন্তার বিষয়। যাই হোক, BA.4.6 এড়াতে, একটি বুস্টার ডোজ বেশ সফল হতে পারে। যে হেতু এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটির বিষয়ে এখনও সমস্ত তথ্য জানা যায়নি, তাই আপাতত শুধু বুস্টার ডোজের উপর নির্ভর করতে হতে পারে।
টিকা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ
BA.4.6 এবং অন্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট অবশ্যই উদ্বেগ তৈরি করছে। তাদের নতুন নতুন রূপগুলি প্রমাণ করছে যে মারণ ভাইরাসটি এখনও তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। শুধু তাই নয়, মানুষের উদ্ভাবিতর টিকা থেকে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরে তৈরি হচ্ছে তা ভেঙে ফেলে নিত্য নতুন উপায়ে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কিন্তু টিকা গুরুতর অসুস্থতার বিরুদ্ধে ভাল সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এটি এখনও সেরা অস্ত্র বলেই মনে করা হচ্ছে। বাইভ্যালেন্ট বুস্টারের সম্প্রতি অনুমোদন পেয়েছে। অবশ্যই এটি সুসংবাদ। এ ছাড়াও, ‘মাল্টিকম্পোনেন্ট করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন’ তৈরির কাজও চলছে। এটি করোনাভাইরাসের একাধিক রূপের বিরুদ্ধে আরও দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে নেওয়া মাল্টিকম্পোনেন্ট করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন কোভিডের আসল রূপ এবং এর অন্য দু’টি রূপের উপর আরও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আপাতত BA.4.6-সহ নতুন রূপগুলি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কারণ তারা কোভিড অতিমারীর পরবর্তী তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিটি দেশেই প্রচার চালান হচ্ছে এই অতি সংক্রামক ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং যে কোনও কোভিড নিয়ম মেনে চলতে হবে।