গত সাত বছর ধরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বিপুল সংখ্যার উদ্বাস্তুর জন্ম দিয়েছে। শিশু-পরিবারকে নিয়ে পালাতে গিয়ে মৃত্যুও হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষের। আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলি থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন অন্য দেশে। উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে অনেকেই রাজি নয়। সবচেয়ে বাধা প্রথম বিশ্বের দেশগুলি থেকেই। যুক্তি, উদ্বাস্তুদের হাত ধরেই ঢুকে পড়ছে সন্ত্রাস। এছাড়া চাপ পড়ছে দেশের অর্থনীতিতেও।
advertisement
তবে ২০১৭-য় সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়ে গেল রোহিঙ্গা সংকট। সমস্যা দীর্ঘদিনের। মায়ানমার সরকার রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী এই সম্প্রদায়ের মানুষকে নাগরিক বলে মনে করে না। সরকারিভাবে তাঁরা বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারে গিয়ে বেআইনিভাবে রয়েছেন, এমনটাই অভিযোগ।
স্বাধীনতার পর থেকেই সরকারের এই যুক্তির বিরোধিতা করে চলেছেন রোহিঙ্গারা। পরিস্থিতির অবনতি হয় ২৫ অগাস্ট। চরমপন্থী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সলিড্যারিটি আর্মি আক্রমণ চালায় একাধিক পুলিশ ফাঁড়িতে। নিহত হন ১২ জন। এরপরই পাল্টা অপারেশনের নামে মায়ানমার সেনা। জঙ্গিদমনের নামে রাখাইন প্রদেশে শুরু হয় নির্মম দমন-নিপীড়ন। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি। অভিযোগ ওঠে ধর্ষণেরও। নিহত হন অসংখ্য মানুষ। প্রাণভয়ে শুরু হয় দেশ ছাড়া।
বিশ্ব দেখল, ভিটে ছেড়ে জলপথে, স্থলপথে শিশু কোলে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ চলেছেন বাংলদেশের পথে। নৌকো-জাহাজে জায়গা না পেয়ে ভেলায় ভাসতা ভাসতে বাঁচার শেষ চেষ্টা। পৌঁছতে পারলেন কেউ কেউ। পারলেন না অনেকেই। সীমান্তের কাছে আটকে থাকলেন। অনেকেই হারিয়ে গেলেন। এতকিছুর মধ্যেও অস্বাভাবিকরকম চুপ একসময়ে মায়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়া বর্তমান প্রধান, অং সাং সু-কি।
নিন্দার ঝড় উঠল বিশ্ব জুড়ে। মায়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়নোর চেষ্টা শুরু। ফিরিয়ে নিতে হবে রোহিঙ্গাদের।
অবশেষে ২৩ নভেম্বর চুক্তি সই করল মায়ানমার-বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, দু’মাসের মধ্যে মায়ানমার ফিরে যেতে পারবেন রোহিঙ্গারা। তৈরি হল দু্’দেশের ১৫জন করে তৈরি ৩০ জনের যৌথ কমিটি। উদ্বাস্তু শিবির থেকে দাবি ওঠে, শুধু দেশে ঢুকতে দেওয়া নয়, ফিরিয়ে দিতে হবে বাস্তুভিটে। দিতে হবে নাগরিকত্বও। এ নিয়ে অবশ্য এখনই প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি নয় মায়ানমার। তাই আশা-আশঙ্কার দোলাচলে রোহিঙ্গারা। দেশ? উদ্বাস্তুদের আবার দেশ হয় না কি?