এই প্রসঙ্গে বলে রাখা উচিত হবে যে এই ব্যক্তি আরকানসাসের বাসিন্দা, ভারতীয় বংশোদ্ভূত কপিল রঘু এখন নিয়মিত ট্র্যাফিক স্টপের সময় ভুল বোঝাবুঝির কারণে গ্রেফতারর হওয়ার পর থেকেই তাঁর মার্কিন ভিসা পুনর্বহালের জন্য লড়াই করছেন। তাঁর সুগন্ধির নাম ওপিয়াম, মানে আফিম। ওপিয়াম নামের সুগন্ধি অপ্রচলিত কিছু নয়। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ ওপিয়াম লেবেলযুক্ত ডিজাইনার পারফিউমের বোতলটিকে নিষিদ্ধ মাদক ভেবে ভুল করেছেন বলে অভিযোগ, যার ফলে রঘুকে আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়।
advertisement
রঘুর গ্রেফতার সম্পর্কে যা জানা গিয়েছে
রঘু একজন আমেরিকান নাগরিকের সঙ্গে বিবাহিত এবং এই কারণে তিনি ওই দেশে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করছিলেন, ৩ মে, ২০২৫ তারিখে বেন্টন পুলিশ তাঁকে একটি ছোট ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য আটক করে। অফিসাররা তার গাড়িতে ওপিয়াম লেখা একটি ছোট বোতল আবিষ্কার করেন এবং ধরে নেন যে এতে কোনও নিষিদ্ধ পদার্থ রয়েছে।
রঘু বার বার ব্যাখ্যা করেছিলেন যে ওই বোতল সুগন্ধি্র, কিন্তু তার পরেও তাঁকে মাদক রাখার সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বডিক্যামের যে ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে অফিসাররা তাঁকে বলছেন, “তোমার সেন্টার কনসোলে আফিমের একটি শিশি ছিল।” রঘু, যিনি সেই সময়ে খাদ্য সরবরাহকারী ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন, পরে স্থানীয় সংবাদপত্র ‘দ্য স্যালাইন কুরিয়ার’-কে বলেন যে তিনি অফিসারদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন, যদিও ঘটনাটি দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছেন।
সুগন্ধি ক্ষতিকারক নয় বলে নিশ্চিত করা হয়েছে, কিন্তু আইনি বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে
আরকানসাস স্টেট ক্রাইম ল্যাবের পরবর্তী পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে বোতলটিতে মাদকদ্রব্য ছিল না। তবে, রঘু তিন দিন স্যালাইন কাউন্টি জেলে কাটিয়েছেন, যেখানে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ভিসার নানা অনিয়ম তুলে ধরেছেন। তাঁর আইনজীবী মাইক লক্স বলেছেন যে সমস্যাটি রঘুর পূর্ববর্তী আইনজীবীর “প্রশাসনিক ত্রুটির” কারণে ঘটেছে।
গ্রেফতারের পর রঘুকে লুইসিয়ানার একটি ফেডারেল মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে তাঁকে ৩০ দিনের জন্য আটক করেরাখা হয়। যদিও ২০ মে, ২০২৫ তারিখে একটি জেলা আদালত মাদকদ্রব্যের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়, কিন্তু এই আটক থাকার সময়ে তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়, যার ফলে তাঁকে আইনি মর্যাদা ছাড়াই আটকে রাখা হয় এবং নির্বাসনের ঝুঁকিতে রাখা হয়।
“আমার ধারণা যদিও কপিলকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, এখন তাঁর উপরে নির্বাসনের খাঁড়া ঝুলছে, যার অর্থ যে কোনও ছোটখাটো অপরাধের জন্য, এমনকি জেওয়াকিং-এর জন্যও তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাসিত করা হতে পারে,” লক্স দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন। “আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই ব্যবস্থা তাঁকে কাজ করতে এবং তাঁর পরিবারকে সাহায্য করতে বাধা দেয়, যা তাঁদের জন্য ধ্বংসাত্মক।”
আইসিইর আইনি অফিসে লেখা এক চিঠিতে রঘু বলেন, ভিসার সমস্যাটি তাঁর আইনজীবীর কাগজপত্র জমা দিতে বিলম্বের কারণেই তৈরি হয়েছে এবং তিনি তাঁর মর্যাদা পুনর্বহালের অনুরোধ করেছেন। “ক্রমবর্ধমান আইনি ফি এবং অবদান রাখতে না পারার চাপ আমাদের পরিবারের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে,” তিনি লিখেছেন। “আমার স্ত্রী পুরো আর্থিক বোঝা বহন করছেন।”
তাঁর স্ত্রী আলহলি মেস বলেছেন যে এই পরিস্থিতি তাঁদের মানসিক এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এপ্রিল মাসে বিয়ে হওয়া এই দম্পতি তাঁদের সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন, তাঁদের একটি বাড়ি কেনার ইচ্ছা ছিল, এখন মেস আইনি খরচ বহন করার জন্য তিনটি চাকরি করেন।
“এটা শুধু কপিল আর আমাকেই প্রভাবিত করছে না। আমার মেয়ে তাকে বাবার মতোই মনে করে,” মেস বলেছেন। “এটা শুধু কোলোন ছিল… যদি এখন কোনও পুলিশ আমার পিছনে লেগে যায়, আমি আতঙ্কে রয়েছি”, তিনি বলছেন।
রঘুর আইনজীবী আরও অভিযোগ করেছেন যে বেন্টন পুলিশ ভিয়েনা কনভেনশন অন কনস্যুলার রিলেশনসের অধীনে ভারতীয় কনস্যুলেটকে অবহিত না করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। আইসিই তত্ত্বাবধানকারী মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এখনও এই বিষয়ে কোনও বিবৃতি জারি করেনি।