পাকিস্তানের এয়ার স্ট্রাইকের তীব্র নিন্দা করেছে আফগানিস্তান। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, নিরীহ মানুষের উপর এয়ার স্ট্রাইক করেছে পাক সরকার। এঁদের বেশিরভাগই ওয়াজিরিস্তান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থী। হামলায় মহিলা ও শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। মন্ত্রকের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তান এটাকে নিষ্ঠুর কাজ বলে মনে করে। আন্তর্জাতিক নীতির বিরুদ্ধে সুপষ্ট আগ্রাসন। আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
advertisement
আরও পড়ুন: বিরাট খবর! প্রথমবার এই চুক্তি করে ফেলল ভারতীয় রেল! উপকার পাবেন লাখ-লাখ মানুষ
তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি হল সশস্ত্র সংগঠনের একটি জোট। এরাই তালিবান পাকিস্তান নামে পরিচিত। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে লড়ার উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে টিটিপি তৈরি হয়। এদের লক্ষ্য হল, উপজাতীয় এলাকা এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ থেকে ইসলামাবাদের প্রভাব কমানো। পাশাপাশি গোটা পাকিস্তানে শর্তাধীন শরিয়া আইন লাগু করাও এদের অ্যাজেন্ডায় রয়েছে।
টিটিপি-এর নেতারা পাকিস্তানি সরকারকে উৎখাত করে ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চান। শুরুর দিন থেকেই আল-কায়দার প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছেন তাঁরা। টিটিপি-এর প্রথম নেতা হলেন বেইতুল্লাহ মেহসুদ। ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর দলের দায়িত্ব নেন হাকিমুল্লাহ মেহসুদ। বর্তমানে টিটিপি প্রধানের পদে রয়েছেন মুল্লা ফজলুল্লাহ।
নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তান থেকে তালিবানদের বের করে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময় তাদের সেফ প্যাসেজ দিয়েছিল পাকিস্তান। ২০১৬ সালের পর খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে অভিযান শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এই অভিযানে মূলত টিটিপি-কেই এলাকা থেকে বিতাড়ন করা হয়। কিন্তু ততদিনে আফগান তালিবানদের সঙ্গে পাকিস্তানি তালিবানদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
২০২২ সালে পাখতুনখোয়া অশান্ত হয়ে ওঠে। সেই সময় অনির্দিষ্টকালীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল টিটিপি। অনেক প্রদেশেই তাঁরা রীতিমতো প্রশাসনের ভূমিকায় নেমে পড়েন। চেকপয়েন্ট স্থাপন, যাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায়, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের অপহরণ, এবং সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ও উপজাতীয় নেতাদের হত্যা চলতে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে আফগানিস্তানে তালিবান শাসনের এক বছর পর পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা ৫১ শতাংশ বেড়ে যায়। ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর, আসিম মুনির বাওজওয়ার থেকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে পদ গ্রহণের একদিন আগে, টিটিপি-এর কেন্দ্রীয় কমান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহার করে।