BNP চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়েছে -“BNP চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই৷” জিয়া ২৩ নভেম্বর থেকে Evercare Hospital-এ একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতার জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং এই মাসের শুরুতে তাঁর ডাক্তাররা তাঁর অবস্থা “চরম সংকটজনক” বলে জানিয়েছিলেন—তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টেও রাখা হয়েছিল।
খালেদা জিয়া কে ছিলেন?
advertisement
মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মানো খালেদা জিয়া, ১৯৫৯ সালে জিয়া উর রহমানকে বিয়ে করেন, যিনি একজন সামরিক অফিসার ছিলেন এবং পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও দেশের প্রেসিডেন্ট হন। খালেদার স্বামীকে ১৯৮১ সালে হত্যা করা হয় এরপরেই তিনি রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেন৷ ১৯৮৪ সালে BNP-র নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, সে সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল অস্থির।
বিনপি নিজেদের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছে- BNP চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বেগম খালেদা জিয়া, আজ সকাল ৬:০০-এ, Fajr নামাজের কিছুক্ষণ পর মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং সবাইকে তাঁর জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানাই।
তিনি ইতিহাস গড়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়ে, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দুই মেয়াদে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে। প্রথম মেয়াদে তিনি দেশকে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনেন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার, শিক্ষার সুযোগ, এবং নারীদের জন্য সুযোগ নিয়ে কাজ করেন। তবে তাঁর মেয়াদে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক সংকট, এবং সামাজিক অস্থিরতা।
২০০১-২০০৬ মেয়াদে তিনি দুর্নীতি ও সন্ত্রাস মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদিও এই দুই সমস্যা তাঁর সরকারের সময়ও বড় সমস্যা ছিল।
খালেদা জিয়া-র কেরিয়ারও চিহ্নিত ছিল শেখ হাসিনা-র সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে, যিনি প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামি লিগ (Awami League) পার্টির নেতা, এবং দু’জনই পালাক্রমে দশকের পর দশক ক্ষমতার শীর্ষে নিজেদের ধরে রেখেছিলেন৷
প্রধানমন্ত্রীত্বের হারানোর পর বিভিন্ন সময়ে তিনি একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সাজা পেয়েছিলেন, যা তিনি এবং তাঁর সমর্থকরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন। তিনি দীর্ঘদিন জেল এবং গৃহবন্দিত্বে ছিলেন, পরে চিকিৎসার জন্য মুক্তি পান।
খালেদা জিয়া তাঁর জীবনের পুরো সময় জুড়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নারী রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতীক ছিলেন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতিতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন৷ যদিও বিতর্কও তাঁর সঙ্গে সঙ্গেই চলত৷
ছেলের প্রত্যাবর্তন
বাংলাদেশে জনগণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মুহম্মদ ইউনূসের পরিচালনাধীন সরকার রয়েছে৷ উৎখাত করা হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে৷ এই অবস্থায় ফেব্রুয়ারি ১২-তে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ স্থির হয়েছে৷ তার আগেই খালেদা জিয়ার মৃত্যু ঘটল৷ ডিসেম্বর ২৫-এ, ১৭ বছর নির্বাসনের পর, তাঁর ছেলে তারিক রহমান (Tarique Rahman) বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। এখন, জিয়া-র মৃত্যুর পর, রহমান সম্ভবত BNP-র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন, মায়ের হাত থেকে ব্যাটন ছেলের হাতে গেল৷
তবে জিয়া ছিলেন BNP-র একদম পুরনো নেতৃত্বের জন্য ঐক্যবদ্ধকারী একজন, এমনকি রহমানে-র সমালোচক গোষ্ঠীর মধ্যেও। তাঁর মৃত্যু পার্টির জন্য একটি শক্তিশালী আবেগের ভিত্তি সরিয়ে দিয়েছে, যার ফলে রহমানে-র জন্য দলীয় বিভাজন সামলানো এবং শুধু নিজের অবস্থান দিয়ে আনুগত্য আদায় করা আরও কঠিন হবে।
জিয়া-র চলে যাওয়া এখন রহমানের প্রত্যাবর্তনে জরুরি এবং আবেগঘন মাত্রা যোগ করেছে। যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন, রহমানে নির্বাসন থেকে পার্টির ডি-ফ্যাক্টো নেতা থাকতে পারতেন, আর তিনি ছিলেন নৈতিক ভিত্তি। এখন তিনি নেই, BNP এবং তার সমর্থনভিত্তি থেকে চাপ বাড়তে পারে—তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের নেতৃত্ব নিতে হবে।
