কাঠমান্ডু: জ্বলছে নেপাল৷ গত মঙ্গলবার রাত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সে দেশের সেনা নিজের হাতে তুলে নিলেও কোনও ভয়, কোনও হুঁশিয়ারিতেই বাধ মানছে না৷ বুধবারও বিক্ষোভের আগুনে জ্বলেছে নেপাল৷ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেদেশের উল্লেখযোগ্য সংবাদমাধ্যমের বিল্ডিংয়ে ৷ রাস্তায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে গাড়িতে৷
advertisement
সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়ায় গত সোমবার থেকে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয় নেপালের রাস্তায়৷ পথে নামে Gen Z ৷ Gen Z-এর বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে মৃত্যু হয় ১৯ জনের৷ আর তাতেই ঘৃতাহূতি পড়ে বিক্ষোভের আগুনে৷ শেষমেশ Gen Z র দাবি মেনে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও কুর্সি বাঁচাতে পারেননি কে পি ওলি৷ কিন্তু, এই পরিস্থিতির মাঝে অনেকেরই প্রশ্ন৷ কারা এই Gen Z? এটা কি একটা প্রজন্ম, নাকি একটা সংগঠন? এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে কে? বা কারা?
প্রকৃতপক্ষে, ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের পর থেকে নেপালে যে পরিস্থিতি চলছে, সেই দুর্নীতি, বেকারত্ব, স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে একত্রিত ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে একটা প্রজন্ম৷ প্রাথমিক ভাবে ছাত্র ও তরুণ সমাজ Gen Z হলেও, ক্রমে তাতে শামিল হয়েছেন ৩০-৩৫ বছরের ব্যক্তিরাও৷
এই Gen Z আন্দোলনের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ অবশ্যই সুদান গুরুঙ৷ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে তাঁর কোলেই প্রাণ হারিয়েছিল এক শিশু৷ সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার পর থেকেই ‘হামি নেপাল’ বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করেছিলেন পেশায় ডিজে গুরুঙ৷
সেই শুরু৷ সুদানের সেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ২০২৫ দাঁড়িয়ে বেড়েছে বহরে, আয়তনে৷ বর্তমানে প্রায় ১৬০০ সদস্য রয়েছে এই এনজিও-র৷ গত ৯ সেপ্টেম্বরের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যানের পরে গুরুঙই প্রথম জমায়েত ডাকেন৷ বলেন, সকলে স্কুল ইউনিফর্ম পরে, হাতে খাতা নিয়ে পথে নামুন৷ ক্রমে সেই বিক্ষোভ হুহু করে বাড়ে৷ আগুন, ভাঙচুর, লুটপাঠ, এসবও চলে৷ সোম পেরিয়ে আসে মঙ্গল-বুধে৷
তবে শুধু হামি নেপালই নয়, Gen Z র বিক্ষোভে ছিল ‘জেনারেল জেড নেপাল’, ‘হাউ টু ডেজ বিকাশ’ এই সমস্ত গ্রুপ৷ এরা প্রত্যেকেই অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, সিংহদুয়ার, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আগুন লুটপাঠের ঘটনার সঙ্গে নিজের দূরত্ব বজায় রেখেছে৷
গত মঙ্গলবার সারাদিন ধরে, ‘জেনারেল জেড নেপাল’, ‘হামি নেপাল’ এবং ‘হাউ টু ডেজ বিকাশ’ এবং আরও অনেক তরুণ কন্টেন্ট নির্মাতা সহ গোষ্ঠীগুলি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিবৃতি দিয়ে পোস্ট করতে থাকে যে ভাঙচুর এবং সহিংসতা তাদের নয়। তারা বলেছে যে তাদের লক্ষ্য সহিংসতা উস্কে দেওয়া নয়, এবং আরও জীবন এবং ভবিষ্যত নষ্ট হওয়ার আগে সমস্ত বিক্ষোভকারীদের সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে তারা। Gen Z কর্মীরা অনলাইনে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করে জোর দিয়ে বলেন যে,তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ নাগরিক সম্পৃক্ততার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ সাম্প্রতিক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা থেকে নিজেকে দূরে রাখে তারা৷
আরও পড়ুন জুলাই বিপ্লবের পরে প্রথম ছাত্র ভোট! কারচুপির অভিযোগের মাঝেই বিপুল ভোটে জয়ী জামাতপন্থীরা
‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এবং জনসাধারণের সম্পত্তি ভাঙচুরের বিষয়ে স্পষ্টীকরণ’ শীর্ষক বিবৃতিতে, ‘Gen Z প্রতিবাদকারী’ ব্যানারে দলগুলি জোর দিয়ে বলেছে যে,তাদের কর্মীরা বিপদ থেকে উদ্ধার করতে, নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে এবং জনসাধারণের সম্পত্তি রক্ষা করতে সক্রিয়ভাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে৷
বিবৃতিতে হিংসায় জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সাথে যে কোনও ধরনের সম্পর্ক প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি বা সুবিধাবাদীদের দ্বারা আন্দোলনকে হাইজ্যাক করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে।সামাজিক মাধ্যমে প্রচার যে নাখু জেল ভাঙচুর এবং লক্ষ লক্ষ টাকার সমবায় আমানত আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির নেতা রবি লামিছানের মুক্তির সাথে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। ভবিষ্যতের কথা ভেবে নেপাল সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনে কারফিউ বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের লক্ষ্য দৃঢ়: যোগ্য, দুর্নীতিমুক্ত নেতাদের নিয়ে একটি সঠিক সরকার।” Gen Z-র দাবি, “আমরা ঐক্য, সততা এবং শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য দাঁড়াতে থাকব।”
জেনারেল জেড বিক্ষোভের জন্য চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করা হামি নেপাল গোষ্ঠীটি সাম্প্রতিক লুটপাটের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। “এটা আমরা নই,” জাতীয় বাণিজ্য ব্যাঙ্ক এবং হিমালয়ান ব্যাঙ্কে ভাঙচুর এবং ডাকাতির প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তারা বলেছে, “এটা একেবারে স্পষ্ট করে বলা যাক: এটি Gen Z নয়। এটা আমাদের আন্দোলন নয়। আমরা এটাকে প্রচার করি না এবং আমরা কখনই এর সাথে থাকব না।”
Gen Z সোশ্যাল মিডিয়ার বার্তা জানিয়েছে, ‘নতুন করে আর কোনও আন্দোলন বা হিংসা, অশান্তি নয়। অবিলম্বে নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকারে কোনও পুরনো রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ নয়। জেন-জেডের প্রতিনিধিদের প্রাধান্য দিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে। দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়াই প্রাথমিক কাজ। গত ২ দিনের হিংসায় নিহতদের শহিদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। ’জেন-জেডের পক্ষে রবি কিরণ হামাল এদিন এই প্রেস বিবৃতি দেন৷