কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার বাঙালির। তাঁর বারো মাসে চোদ্দ পার্বণে কোনও কম্প্রোমাইজ করতে নারাজ সে। আর তাই কলকাতা থেকে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়েও মা (Durga Puja 2021| (BCAA Arizona) আসেন। আর তাঁকে ঘিরে মেতে ওঠেন দুই বাংলার মানুষ। এখানে গঙ্গা আর পদ্মার জলের মতোই বাঙালির পুজোয় মিলেমিশে যায় এপার ও ওপার বাংলার মানুষ।
advertisement
আরও পড়ুন: সাজছে স্যাক্রামেন্টো! করোনা আবহে প্রবাসী পুজোর জমজমাট কাউন্টডাউন শুরু...
মরুভূমির মাঝখানে মরুদ্যান বললে অত্যুক্তি হবে না। সেরকম এক শহর ফিনিক্স, মার্কিন দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমে অ্যারিজোনাতে ফিনিক্সই সবচেয়ে বড় শহর। বোয়িং, ইন্টেল, অ্যামাজন-এর মত অনেক নামি শিল্প সংস্থা বেশ কয়েকবছর ধরে কাজ করে চলছে। শহরটিতে রয়েছে তিন তিনটে বড় সরকারি ইউনিভার্সিটি। এছাড়াও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি আর কম্যুনিটি কলেজ আছে বেশ কয়েকটা।
অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে সারা বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমন-বিলাসীরা আসেন অ্যারিজোনাতে। তার অন্যতম কারণ সপ্তাশ্চর্যের এক 'গ্র্যান্ড ক্যানিওন' (Grand Canyon)। ছবির মত লাল পাহাড়ী উপত্যকা সেডোনা (Sedona) যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে পর্যটকদের। আনাগোনা তাই লেগেই আছে পরিযায়ী মনের। মোট ৭০ লক্ষের মতো মানুষের বাস এই রাজ্যে; তবে ভিন-রাজ্যের মানুষ এখানে সবসময় যাতায়াত করছে।
দুই বাংলা মিলিয়ে কয়েক দশক ধরে এখানে বসবাস করছেন বড় সংখ্যক বাঙালি মানুষ। তাই পুজো-পার্বণের (Durga Puja 2021| BCAA Arizona) আয়োজন প্রায় ৩৫ বছর ধরে চলছে। অতিমারীর জন্যে ২০২০-এর পুজো খুব সংক্ষেপে হয়েছিল। তবে এই বছর একটু পরিস্থিতি ভালো। তাই পুজোর সময় বাঙালি মন আর ঘরে আটকে থাকতে চাইছে না।
তবুও সংশয় রয়েছে। করোনাভাইরাসের(Coronavirus) তৃতীয় ধাক্কা, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট চোখ রাঙাচ্ছে। তবে এত অনিশ্চয়তার মধ্যেও কোনও এক ম্যাজিক বলে একে একে সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করাহচ্ছে সুষ্ঠুভাবে। বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যারিজোনার (Durga Puja 2021| BCAA Arizona) প্রেসিডেন্ট শ্রী আবীর ভট্টাচার্য বলছিলেন তাঁদের দুর্গাপুজোর পরিকল্পনার কথা।
জানালেন, পুজোর আনন্দ আয়োজনের মধ্যেই এবারে বেশ খানিকটা নজর রাখা হয়েছে কোভিড নিয়ম বিধির দিকে। পুজোর দিন ঠিক হয়েছে অক্টোবর ১৫ থেকে ১৭, শুক্র, শনি, রবি। সিডিসি (CDC) নিয়ম মেনেই সব অনুষ্ঠান ও পুজোর কাজ হবে বলে জানালেন আবির। অর্থাৎ ১২ বছরের উর্দ্ধে ভ্যাকসিন প্রুফ লাগবে আর অভ্যন্তরীণ পরিবেশে মাস্ক পরতে হবে।
আর পাঁচটা প্রবাসের পুজোর মতোই সপ্তাহান্তের এই পুজোয় তিনদিনের মধ্যেই হবে সপ্তমীর কলা বউ স্নান, অষ্টমীর অঞ্জলি আর নবমী নিশিযাপন শেষে দশমীর সিঁদুরখেলা।
পুজো ঘিরে প্রতিদিনই থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নাচ, গান, নাটক বিভিন্ন স্বাদের সংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে সেজে উঠছে প্রতিদিনের সান্ধ্য পসরা। যদিও মুম্বই এবং কলকাতার কোনও শিল্পীর পরিকল্পনা এবার নেই বলেই জানালেন বি.সি.এ.এ.-র প্রেসিডেন্ট আবির। ইতিমধ্যেই হই হই করে শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর প্রস্তুতি পর্ব। শুরু হয়েছে মণ্ডপ সজ্জা দিয়ে। বাকি কাজ এগোচ্ছে দ্রুত। পাশাপাশি চলছে নাচ, গান, নাটকের রিহার্সাল।
আরও পড়ুন: বাড়ির গ্যারেজ থেকে শুরু, ৩৮ বছরের দুর্গাপুজো তাক লাগাচ্ছে গোটা ইন্দোনেশিয়ায়!
বি.সি.এ.এ.-র প্রতিমা পুজো শেষে কিন্তু বিসর্জন হয় না। যত্নসহকারে মা দুর্গা রাখা থাকেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে।বিগত ১৫ বছরের বেশী সময় ধরে এই প্রতিমাতেই পুজো করে চলেছেন অ্যারিজোনার বাঙালি বাসিন্দারা।
অতিমারি কাটিয়ে যে আয়োজন আর প্রস্তুতি চলছে তা কিন্তু যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া চলছে, চলছে দুর্গা মায়ের পুজোর শেষ মুহূর্তের সাজ গোজ। আর এভাবেই দশভূজার আশীর্বাদ ও শক্তি নিয়ে আস্তে আস্তে 'করোনাসুরের' দাপট মোকাবিলা করে সাধারণ জীবনযাত্রায় ফিরে যাওয়ার তীব্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অ্যারিজোনার এই বাসিন্দারা।
তথ্য ও ছবি : কোহিনূর কর (গত ১৭ বছর অ্যারিজোনার বাসিন্দা কোহিনূর )