ঢাকা: মা নুসরাত বেগমের সঙ্গে মাংস কিনতে বেরিয়েছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বাংলাদেশের রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলীতে একটি ভবনের নিচতলায় নয়নের মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হয়। তীব্র ঝাঁকুনিতে দোকানের সামনে থাকা ক্রেতাদের ওপর ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে।
advertisement
এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন রাফিউল ও তাঁর মা নুসরাত। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। রাফিউলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাঁর মা নুসরাত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন।
বংশালের কসাইটুলীর যে ভবনটির ছাদের রেলিং ভেঙে পড়েছে, সেটিতে থাকেন সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাওনাক। তিনি বলেন, ভূমিকম্পে পুরো বিল্ডিং দুলছিল। ওপর থেকে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনে তিনি নিচে যান। দেখেন, নিচের গলিতে একজন শিশুসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের কয়েকজন ধরে দ্রুত রিকশা ও ভ্যানে হাসপাতালে নিয়ে যান। ততক্ষণে নিচের অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছেন।
মাংসের দোকানটিতে আজ মহিষ জবাই করে বিক্রি করা হয়। এই মাংস কিনতে ভবনটির নিচে অনেকে ভিড় করেছিলেন। বেলা একটার দিকে দেখা যায়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে কান্না করছেন রাফিউলের সহপাঠী ইমতিয়াজ উদ্দিন নাদিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি, রাফিউল তাঁর মায়ের সঙ্গে বাজার করতে গিয়েছিল। সকালে ফেসবুক গ্রুপে দেখলাম। রাফিউলের একটা ছবি দেওয়া। মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। এখানে এসে দেখি, সে আর নেই। ওর মা গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।’
রাফিউলের আরেক বন্ধু বলেন, ‘সে (রাফিউল) খুবই শান্তশিষ্ট একটা ছেলে ছিল। আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে ক্লাস করেছে। তার মারা যাওয়ার ঘটনা আমরা কোনও ভাবেই মানতে পারছি। কী বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’ জানা গিয়েছে, রাফিউলের গ্রামের বাড়ি বগুড়া। তাঁরা দুই ভাই-বোন। বাবা চাকরি করেন দিনাজপুরে। হলে সিট পেলেও মা ও বোনের সঙ্গে বংশালের বাসায় থাকতেন তিনি। ভূমিকম্পে হতাহতের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান রাফিউলের একমাত্র বোন।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজহারুল ইসলাম খান বলেন, ২০ জনের মতো আহত ব্যক্তি এখানে আসেন। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
