লাদাখের গালওয়ানে চিনা হামলায় তিন ভারতীয় সেনার মৃত্যু। এই ঘটনা অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৭৫ সালের কথা। ভারত-চিনের মধ্যে সেই শেষ সংঘর্ষ যাতে মৃত্যু হয় ভারতীয় সেনার। গত মে মাসের শুরু থেকেই সীমান্তে ভারত-চিন সংঘাতের আবহ। কিন্তু, চল্লিশ বছর আগে পরিস্থিতি ছিল একেবারে অন্যরকম।
১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর। অরুণাচল প্রদেশে সীমান্ত তখন শান্ত। ভোরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ধরে রুটিন টহলদারিতে বেরোন অসম রাইফেলস-এর ২৫ ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ২৪০ মিটার উচ্চতায় থাকা মাগো গ্রাম ছেড়ে টহলদারি দল আরও উপরে ওঠে। হিমালয়ের কোলে দুর্গম এবং প্রত্যন্ত তুলুঙ-লায়ের দিকে। মাগো গ্রামের মতোই কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৪ হাজার ৮৬৩ মিটার উঁচুতে থাকা তুলুং-লা। প্রায় ১৫ দিন পরে সেনার একটি বার্তা প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, সে দিন তুলুঙ-লাতে পৌঁছনোর কিছুটা আগে চিনা সেনা এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। শহিদ হন অসম রাইফেলসের ৪ জওয়ান।
advertisement
৪৫ বছর পরে আবার। এবার গুলিগোলা চলেনি। তবে চিনা হামলায় ফের ভারতীয় সেনার মৃত্যু। এবার গালওয়ান উপত্যকায়। সেই গালওয়ান উপত্যকা যা নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে কোনও বিরোধই ছিল না। সেখানেও মে মাস থেকে চিনের আগ্রাসন নীতি। কিন্তু, কেন? বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। চিনের সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ, লাদাখে ভারতের তৈরি ২৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দারবুক-শায়ক-দৌলত বেগ ওল্ডি রোড ৷ DSDBO রোড এগিয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার সমান্তরালে ৷ এই রাস্তাতেই তৈরি করা হয়েছে ৩৭টি ব্রিজ ৷ নতুন এই রাস্তা দিয়ে ভারতীয় সেনা সহজেই এখন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় পৌঁছে যেতে পারে ৷ রাস্তাটি শেষ হয়েছে কারাকোরাম পাসের কাছে। যে এলাকাটি কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ ২৫৫ কিলোমিটারের এই রাস্তা তৈরি হওয়ার ফলে ভারতীয় সেনা এখন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার আশপাশের বিভিন্ন দুর্গম এলাকাতেও পৌঁছে যেতে পারবে ৷ এছাড়া আরও কয়েকটি ফিডার লিঙ্ক রোড তৈরিরও কাজ চালাচ্ছেন সেনা জওয়ানরা ৷ বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, সীমান্ত এলাকায় ভারত এভাবে পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়াতেই চাপে পড়ে গিয়েছে চিন। এছাড়াও, মোদি সরকার জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখকে তিনটি কেন্দ্রশাসিত এলাকায় পরিণত করার পর বেজিংয়ের উদ্বেগ বাড়ে। কারণ, বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে নির্মীয়মান অর্থনৈতিক করিডর লাদাখের একাংশের উপর দিয়ে গিয়েছে ৷ তাই বেজিং চাইছে লাদাখকে নিজের হাতে রাখতে ৷ যে কোনও ভাবে লাদাখে ঢুকে কর্তৃত্ব পুরোপুরি কায়েম করতে। বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, চাপে পড়েই, লাদাখে পাল্টা চাপ তৈরি করতে চাইছে চিন। তার জেরেই সংঘর্ষ এবং মৃত্যুর ঘটনা।