চোখে চোখ। একদিকে ভারতীয় সেনা। আরেকদিকে চিনের সেনা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পূর্ব লাদাখের কাছে একাধিক জায়গায় মুখোমুখি ভারত-চিন। উত্তেজনা চরমে। রীতিমতো সংঘাতের পরিস্থিতি। ২০১৭ সালে ভারত-চিন-ভূটান সীমান্তে ডোকলামের পর এরকম সংঘাতের পরিস্থিতি আর তৈরি হয়নি। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে এ বার চিনা সেনার তৎপরতা আগের বারের চেয়ে একেবারেই অন্য রকম।
advertisement
বেজিং দুই থেকে আড়াই হাজার সেনা মোতায়েন করেছে লাদাখের প্যাংগং সো এবং গালওয়ান উপত্যকায়। গালওয়ানে বেজিং বাঙ্কার তৈরিরও চেষ্টা চালাচ্ছে বলে খবর। সেনা সূত্রে খবর, পাল্টা ভারতও বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে বিভিন্ন এলাকা নিয়ে ভারত-চিনের মতভেদ রয়েছে। সেখানে প্রায়ই চিনের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে। তবে, সামরিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, এবার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চিনা সেনার তৎপরতা যথেষ্ট উদ্বেগের।
বিশেষ করে চিন যেভাবে গালওয়ান উপত্যকাকে টার্গেট করেছে সেটা নয়াদিল্লির কাছে চিন্তার। কারণ এই এলাকা নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে কোনও বিরোধ ছিল না।
বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চিনা সেনা ঢুকেছে। তার মধ্যে গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। উপত্যকার দারবুক, শায়ক ও দৌলত বেগ ওল্ডি রোডে চিনা সেনার সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। নিজেদের উপস্থিতি জাহির করতে গত ২ সপ্তাহে এই গালওয়ান উপত্যকায় চিনের সেনা জওয়ানরা প্রায় ১০০টি তাবুও খাটিয়ে ফেলেছেন। ভারতীয় চৌকি ‘কেএম-১২০’-র আশপাশেও রয়েছে চিনা সেনা। পাল্টা ভারতও আগ্রাসী মনোভব নিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নজরদারি চালাচ্ছে।
পূর্ব লাদাখে এই পরিস্থিতির সূত্রপাত গত ৫ মে ৷ ওই দিন সন্ধ্যায় প্যাংগং সো এলাকায় চিনের সেনা জওয়ানদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ভারতীয় সেনার। দুই পক্ষ মিলিয়ে ১০০ জন সেনা আহত হন ৷ এরপর ৯ মে সিকিমের নাকু লা’য় মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায় দু’দেশের সেনা ৷ সিকিম ও লাদাখে, ভারত-চিন সীমান্তবর্তী এলাকায় চিনা বায়ুসেনার হেলিকপ্টারের গতিবিধিও ধরা পড়ে ৷ নয়াদিল্লি অভিযোগ করে, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় সেনার রুটিন নজরদারির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে চিন। পিপলস লিবারেশন আর্মি-র বিভিন্ন কাজকর্মের জেরে লাদাখ ও সিকিমে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে বিভিন্ন এলাকায়, ভারতীয় সেনার সীমান্তরক্ষার কাজে বাধা পাচ্ছে।
এতে অবশ্য চিনা সেনার তৎপরতা বিন্দুমাত্র কমেনি। উল্টে বেড়েছে উত্তেজনাও। রক্তচাপ বেড়েছে নয়াদিল্লির। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে,মঙ্গলবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে ছিলেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং সেনার তিন বাহিনীর প্রধানও।বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ এবং সেনার তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংও।
গত ৫ মে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে ভারত-চিনের মধ্যে ৬ বার বৈঠক হয়। কিন্তু, তাতে কাজ হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার দরকার কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ।