ঝাড়খন্ড ভারতের গরীব রাজ্যের একটি। না খেতে পাওয়া মানুষের সংখ্যাই এখানে বেশি। ১৭র মধ্যে ১৬ নম্বর পাবে এই রাজ্য দারিদ্রতার জন্য। আমি এখানকার আদিবাসী মেয়েদের জন্য সেক্সুয়াল রিপ্রোডাকটিভ স্বাস্থ্য নিয়ে গত ৫ বছর ধরে কাজ করে যা দেখেছি তা আমাকে চমকেছে বার বার। তাদের সঠিক জ্ঞান না থাকার জন্য অনেক মিথ এবং ভুল ধারণা রয়েছে পিরিয়ডস নিয়ে। যার জন্য এখানকার মেয়েরা এখনও মানসিক এবং শারীরিক ভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলগুলোতে অভিযান চালায়। এবং তারা ২০১৪ থেকে মেয়েদের মধ্যে পিরিয়ডস নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও ব্যবস্থা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তা কতদূর সফল হয়েছে? এবং যে অঙ্গনারী কর্মীরা রয়েছেন তাদের ট্রেনিংটাই বা কতটা ঠিক? আবার ভারত সরকার থেকে সারা ভারতে এবং ঝাড়খন্ডের এই সব অঞ্চলেও স্যানিটারি প্যাড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলে স্কুলে মেয়েদের জন্য প্যাডের ব্যবস্থা করা হলেও এখানকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। প্যাড তো দূরের কথা স্কুলগুলোতে একটা ডাস্টবিন ও নেই।
advertisement
MHM স্কিমের মাধ্যমে ভারত সরকার প্রত্যেক স্কুলে স্কুলে মেয়েদের কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু বিষয়টা হল আমি ঝাড়খন্ডের যেখানে কাজ করেছি সেখানে নিয়মিত ভাবে প্যাডের সাপ্পালাই নেই। তাদের কাছে প্যাড আসছেই না। ASHA-কর্মীদের এই সব এলাকার মেয়েদের নিয়ে একটা মিটিং বা আলোচনা করার কথা যার নাম 'কিশোরি সমুহ বা বৈঠক। কিন্তু এই আলোচনা গুলো শুধু কাগজ কলমেই থেকে গেছে। বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ মেয়েরা এই সব সচেতনতা মুলক বৈঠকে আসতেই চায় না। সম্প্রতি MHM পাকুর নিয়ে আমি একটি রিসার্চ করি। সেখানে আমি বলেছি যে, ঝাড়খন্ডে গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি যে ASHA কর্মীদের তেমন কোন ভাল ট্রেনিং হয়নি। তাদেরও কাজের পদ্ধতি নিয়ে এখনও অনেক ধারণা দরকার। এবং গ্রামের মেয়েদের সঙ্গে খোলাখোলি পিরিয়ডসের বিষয়ে কেউ কথা বলে কতটা কাজ করছে তা দেখারও কেউ নেই। আমি একটা ক্যাম্পেন করতে শুরু করি মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবার জন্য। নাম রাখি 'পিরিয়ডসপে চর্চা'। আমি আদিবাসী মেয়েদের সঙ্গে নিজে গিয়ে কথা বলি। তাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করি পিরিয়ডস লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। এই সময় পরিস্কার থাকাটা স্বাস্থ্যের জন্য দারকারি। প্যাডস ব্যবহার করলে শরীরে ব্যাকটিরিয়া ঘটিত সমস্যা হয় না। মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ্য থাকাটা এই সময় খুব জরুরি। আমি অনলাইন পিটিশনও দিই। change.org/PeriodsPeCharcha তে অনেকেই সাড়া দেন। এই পিটিশন মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়। অনেকে এই পিটিশনের সঙ্গে নিজেদের নাম যোগ করেন। এই পিটিশনে ঝাড়খন্ড সরকার যাতে স্যানিটারি ন্যাপকিনস গ্রামের স্কুল গুলোতে এবং অঙ্গনারীদের কাছে ঠিক মতো পৌঁছে দেয় সেদিকে নজর দিতে বলা হয়। তাছাড়া ঝাড়খন্ডের ৫২ শতাংশ মেয়েরই ১৮ বছর পেরোনোর আগেই বিয়ে হয়ে যায়। তাই শুধু মাত্র স্কুলে স্কুলে ন্যাপকিন পাঠিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। গ্রামের প্রত্যেকটা মেয়ের কাছে গিয়ে গিয়ে পিরিয়ডস নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সব মিলিয়ে মেয়েরা এখনও অন্ধকারেই রয়েছে। এই অন্ধকার দূর করার সময় এবার এসেছে। আমার এই কাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরায় মানুষের সাড়া পাই। আমার এই কাজকে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। কিন্তু সবার আগে দরকার ওখানকার বা দলিত মেয়েদের উন্নতি করা। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
