শরৎচন্দ্রকে দেওয়া চিঠিতে রবিঠাকুর লিখছেন, ‘তোমার জন্মদিন উপলক্ষে ‘কালের যাত্রা’ —নামক একটি নাটক তোমার নামে উৎসর্গ করেছি। আশা করি, আমার এ দান তোমার অযোগ্য হয়নি। বিষয়টি এই– রথযাত্রার উৎসবে নরনারী সবাই হঠাৎ দেখতে পেলে মহাকালের রথ অচল। মানবসমাজের সকলের চেয়ে বড়ো দুৰ্গতি, কালের এ গতিহীনতা । মানুষে মানুষে যে সম্বন্ধবন্ধন দেশে দেশে যুগে যুগে প্রসারিত, সেই বন্ধনই এই রথ টানবার রশি । সেই বন্ধনে অনেক গ্রন্থি পড়ে গিয়ে মানবসম্বন্ধ অসত্য ও অসমান হয়ে গেছে, তাই চলছে না রথ । এই সম্বন্ধের অসত্য এতকাল যাদের বিশেষভাবে পীড়িত করেছে, অবমানিত করেছে, মনুষ্যত্বের শ্রেষ্ঠ অধিকার’ ৷
advertisement
রথের দিন এই মন্ত্র জপ করলে তুষ্ট হন জগন্নাথদেব, ফেরে ভাগ্যও
তবে শুধু এই চিঠি খানিই নয়, রথযাত্রা নিয়ে রবিঠাকুরের লেখা একটি কবিতাও রয়েছে ৷ যেই কবিতার প্রত্যেকটি লাইনে উঠে আসবে বাঙালির রথ-উৎসব উদযাপন ৷
সুখদু
বসেছে আজ রথের তলায়
স্নানযাত্রার মেলা-
সকাল থেকে বিকেল হল,
ফুরিয়ে এল বেলা |
আজকে দিনের মেলামেশা
যত খুসি যতই নেশা
সবার চেয়ে আনন্দময়
ও ই মেয়েটির হাসি
এক পয়সায় কিনিছে ও
তালপাতার এক বাঁশি|
বাজে বাশি, পাতার বাঁশি
আনন্দস্বরে |
হাজার লোকের হর্ষধ্বনি
সবার উপরে |
ঠাকুরবাড়ির ঠেলাঠেলি
লোকের নাহি শেষ ,
অবিশ্রান্ত বৃষ্টিধারায়
ভেসে যায় রে দেশ্ |
আজকে দিনের দু
নাই রে দু,
ও ই- যে ছেলে কাতর চোখে
দোকান্- পানে চাহি
একটা রাঙা লাঠি কিনবে
একটি পয়সা নাহি |
চেয়ে আছে নিমেষহারা,
নয়ন অরুণ
হাজার লোকের মেলাটিরে
করেছে করুণ্ |
সৌজন্যে : রবীন্দ্র -রচনাবলী