TRENDING:

পুরনো রথে এখনও মজে রয়েছে নবদ্বীপ

Last Updated:
impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#নবদ্বীপ: বঙ্কিমের রাধারানি পথ হারিয়েছিলেন রথের মেলায়। আর মেলা, রথের ভিড়ে পর্যটক দিশা হারাতে পারেন নদিয়ায়। একশো, দেড়শো এমনকি তিনশো বছর পার করা বিভিন্ন রথ যখন কোন আষাঢ় সন্ধ্যায় পথে নামে তখন অতীত ইতিহাস যেন কিছুক্ষণের জন্য বর্তমান হয়ে যায়। কোনও রথ রাজবাড়ির, কোনও রথ বৈষ্ণব মঠ মন্দিরের, কোনটা আবার নিতান্তই পারিবারিক। এমনকি মণিপুর বা ওড়িশার বাসিন্দারাও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রথের রশি টেনে চলেছেন নদিয়ার বিভিন্ন প্রাচীন জনপদে। সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি এমনকি প্রাকৃতিক পরিবর্তনও রুদ্ধ করতে পারেনি রথের গতি।
advertisement

নবদ্বীপ তথা নদিয়ার অন্যতম প্রাচীন এই রথযাত্রা প্রসঙ্গে গবেষক প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “১৭৪০-৫০ খ্রিস্টাব্দে মণিপুরের মানুষ গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নেওয়া শুরু করেন। মণিপুরের পরম বৈষ্ণব মহারাজ ভাগ্যচন্দ্রের হাত ধরেই ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে নবদ্বীপে মণিপুরীদের উপনিবেশ গড়ে ওঠে। মণিপুরের প্রথা মেনেই রথযাত্রা পালিত হয়।”

মণিপুরের রাজবাড়ির রথ প্রথা প্রকরণে উল্লেখযোগ্য স্বতন্ত্রের দাবি রাখে। একমাত্র মণিপুরের রথেই জগন্নাথদেব একলা আরোহী। রথ থেকে উল্টোরথ প্রতিদিন রাত্রে জগন্নাথদেবের সামনে গাওয়া হয় কবি জয়দেবের দশাবতার স্তোত্র। মণিপুরের রথে জগন্নাথদেব একা কেন? প্রবীরবাবু বলেন, “দ্বারকা থেকে বৃন্দাবনে কৃষ্ণ একা এসেছিলেন। সেখানে তিনি রাধারানি-সহ অন্যান্য গোপিনীদের কৃপা করেন। আমাদের রথে সেই দর্শনটিই অনুসরণ করা হয়। তাই প্রতিদিন রাতে জয়দেবের দশাবতার স্তোত্র পাঠ করা হয়।” মণিপুর রথের আরও একটি বৈশিষ্ট্য, এই রথ যাত্রাপথে বিভিন্ন ভক্তের বাড়িতে থামে এবং সেই বাড়ির তরফে জগন্নাথকে আরতি করা হয় এবং ভোগ দেওয়া হয়।

advertisement

আরও পড়ুন:শুধু নয় রথের রশিতে টান, নিময় মেনে এখনও রথযাত্রায় নতুন যাত্রাপালার বোধন হয় চিত্‍পুরে

নদিয়ার আর এক প্রাচীন শহর শান্তিপুর। তিনশো বছর অতিক্রম করে সেখানে ‘রথের সরান’ বেয়ে গড়িয়ে চলেছে বড় গোস্বামী বাড়ির রথ। বড় গোস্বামী পরিবারের সত্যনারায়ণ গোস্বামী বলেন, “এই রথের বৈশিষ্ট্য হল রথে জগন্নাথদেবের সঙ্গে আর এক আরোহী হলেন রামচন্দ্র। এই রঘুনাথ মূর্তিটি আড়াইশো বছরের প্রাচীন। এই মূর্তি আমাদের পরিবারে আসার আগে থেকেই রথযাত্রা চলছে।” তিনি আরও জানান, রথযাত্রার সকালে দ্বিতীয়া তিথি শুরু হতেই রথ বাড়ি থেকে আগমেশ্বরীতলা পর্যন্ত যায়। সন্ধ্যায় রথযাত্রা হয় না।

advertisement

কিন্তু রথে রামচন্দ্র কেন? সত্যনারায়ণবাবু বলেন, “আড়াইশো বছর আগে শান্তিপুরের তত্‌কালীন বাসিন্দা রামমোহন চট্টোপাধ্যায়ের পারিবারিক রঘুনাথ বিগ্রহটি আমাদের পরিবারে তাঁরা দিয়ে দেন। সেই সময় রথের সাতদিন আগে বিগ্রহ চট্টোপাধ্যায় পরিবারে নিয়ে যাওয়া হত রথে চড়ে। সেই প্রথা আজও হয়ে চলেছে।”

আরও পড়ুন: রানি রাসমণির নির্দেশে তৈরি হল ঝকঝকে রুপোর রথ, খরচের বহর শুনে ঘুরে যাবে মাথা!

advertisement

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
মিষ্টির ময়দানে ছক্কা হাঁকাচ্ছে 'ছক্কা গজা', বাড়িতে কীভাবে বানাবেন? রইল রেসিপি
আরও দেখুন

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু হারিয়েছে ‘সীতানাথ বৈষ্ণব থোর’ জরাজীর্ণ মন্দির। ভাঙাচোরা বাড়ির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে একটি মন্দির যার প্রতিষ্ঠা ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে। ‘থোর’ কথার অর্থ বিশ্রামাগার। ১৭৫৭ সালে হরহর দাস প্রতিষ্ঠা করেন রাধারমণ জীউর মন্দির। তার কিছু পরেই তাঁর শিষ্য গোপীনাথ পাণ্ডা প্রতিষ্ঠা করেন জগন্নাথ মূর্তি এবং শুরু হয় রথযাত্রা। সেই শুরু। মন্দিরের বর্তমান সেবাইত বৃন্দাবন পাণ্ডা জানান, “পুরীর মন্দিরের প্রথা মেনে এখানে রথের উত্‌সব শুরু হয়। স্নানযাত্রার দিন থেকে তার পর দিন জগন্নাথের জ্বর হয়। পাঁচদিন পর বিশেষ পাঁচন খেয়ে সারে সেই জ্বর। ষষ্ঠ দিনে শুরু হয় অঙ্গরাগ। সেই সময়ই আসে অমাবস্যা। সেই দিন হয় বিগ্রহের নেত্র উত্‌সব।” রথের দিন বিশেষ পুজো, অভিষেক, ভোগের পর প্রাচীন রথে পথে নামেন সপার্ষদ জগন্নাথ। মাসীর বাড়ি নেই বলে দিনের দিন ফিরে আসেন মন্দিরে নিঃসন্তান জগন্নাথ। বৃন্দাবন পাণ্ডা বলেন, “এক জায়গাতেই পুরীর মন্দিরের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। পরে এই রথ আর চলবে কিনা জানি না।” খসে পড়া নাটমন্দির, নড়বড়ে রথ আর ভক্তদের উপেক্ষা-এই নিয়েই অস্তিত্বের সঙ্কটে সীতানাথ বৈষ্ণব থোরের প্রভু জগন্নাথ।

advertisement

বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
পুরনো রথে এখনও মজে রয়েছে নবদ্বীপ