TRENDING:

১২ জায়গার ঠাকুর, হালুইকর, গো-বন্দনায় গমগম করত কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বর্ষবরণ

Last Updated:

এক যে ছিল দেশ, আর তার এক যে ছিল রাজা ৷ তাঁর আমলে পুরনো দেশটা বদলে গেল আমুল ৷ চতুর্দিকে রাজার নামে জয়জয়কার ৷ রাজার রাজত্ব সুখে শান্তিতে দিব্যি এগিয়ে চলে ৷

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কৃষ্ণনগর: এক যে ছিল দেশ, আর তার এক যে ছিল রাজা ৷ তাঁর আমলে পুরনো দেশটা বদলে গেল আমুল ৷ চতুর্দিকে রাজার নামে জয়জয়কার ৷ রাজার রাজত্ব সুখে শান্তিতে দিব্যি এগিয়ে চলে ৷
advertisement

তিনি নদিয়ার কৃষ্ণনগরের রাজা ৷ মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ৷ বারবারই তাঁর নাম খুঁজে পাব ইতিহাস বইয়ে ৷ এ দিকে তিনিই শুরু করেছিলেন কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজো ৷ তার হাত ধরেই এই পুজো জনপ্রিয় হয় ৷ চন্দননগরের পুজো এর অনেক পরে শুরু ৷ এরপর রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মা জগদ্ধাত্রী ৷

advertisement

আরও পড়ুন 

সেকালের সুবর্ণবণিক পরিবারে পয়লা বৈশাখের জৌলুসই ছিল আলাদা

কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত বারোদোল মেলাও তাঁর হাত ধরেই শুরু ৷ এই বারোদোলের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে নববর্ষের সুপ্রাচীন ইতিহাসও ৷ নববর্ষ আজ যতই বাঙালি গন্ধ মাখা হোক না কেন, এর সূত্রপাত যদিও মহামতী আকবরের হাত ধরে ৷ সে গল্প আজ প্রায় সকলেরই জানা ৷ কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা তোলার জন্যই নববর্ষের জন্ম ৷ চৈত্র মাসে ফসল ওঠে ঘরে ৷ সেই ফসল বিক্রি করেই টাকা আসে ৷

advertisement

সেই টাকা থেকে মহারাজের খাজনা চোকান কৃষকরা ৷ নতুন করে খাজনার হিসাব রাখার জন্যই এল নতুন ক্যালেন্ডার ৷ কিন্তু কী করে যেন মুঘল দরবার পার করে বাঙালির ধানের গোলায়, মঙ্গলঘট, আমের পল্লবের সঙ্গে আজ অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে গেল নববর্ষ ৷ সেই থেকে পয়লা বৈশাখ হয়ে গেল বাঙালির একান্ত নিজের উৎসব ৷ এই উৎসবকে আরও বেশ খানিকটা জনপ্রিয়তা দিলেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ৷

advertisement

ঠাকুরদালানে মা দুর্গা এবং রাজবাড়ির কূলদেবতা ৷ ছবি: ফেসবুক ৷

যদিও তিনি সিংহাসনে বসার অনেক আগে থেকেই এই রাজপরিবারে পয়লার পার্বণ পালিত হত মহাসমারোহে ৷ রং দোলের এক মাস পর শুক্ল পক্ষের একাদশী থেকে শুরু হয় বারোদোল ৷ আজও এই রেওয়াজ আছে ৷ এক মাস ধরে চলে এই বারোদোলের মেলা ৷ দিনে দিনে এই মেলার নাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা রাজ্যে ৷ এই সময় বারো জায়গা থেকে কৃষ্ণ ঠাকুর আসেন রাজবাড়ির নাট মন্দিরে ৷ সঙ্গে পূজিত হন রাজবাড়ির কূল দেবতা বড় নারায়ণ আর ছোট নারায়ণও ৷ তিন দিন ধরে চলে পুজো ৷ প্রথমদিন ঠাকুরকে সাজানো হয় রাজবেশে ৷ পরের দিন ফুলবেশ, শেষ দিন রাখালবেশ ৷ এই তিন দিন জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় রাজবাড়ির নাট মন্দির ৷ সূক্ষ্ম পঙ্খের কারুকাজ করা সেই নাট মন্দির দেখলে আজও বিস্মৃত প্রায় কোনও এক ইতিহাসের সামনে মাথা নুয়ে আসে ৷ যদিও কালের নিয়মে অনেক কাজই হারিয়ে গিয়েছে আজ ৷

advertisement

এ যুগের মতো সে যুগেও নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বারোদোলের মেলা ৷ তবে সেই সময় রমরমা ছিল আরও বেশি ৷ পয়লা বৈশাখের মোটামুটি ১৫ দিন আগে শুরু হয় আর থাকে নববর্ষের ১৫ দিন পর পর্যন্ত ৷ আগে পয়লা বৈশাখের দিন ভোর থেকে সানাই বেজে উঠত রাজবাড়ির নহবতখানায় ৷ কৃষ্ণচন্দ্র ওই দিন গো-বন্দনার সূচনা করেছিলেন ৷ সারা এলাকার মানুষই গরুকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করত ওই দিন ৷ জাতি-ধর্ম নির্বশেষে সকলে যোগ দিতেন এই অনুষ্ঠানে ৷ আজও কৃষ্ণনগরের গোপ সম্প্রদায়ের মানুষরা পয়লা বৈশাখের দিন মাটির উনুনে মাটির পাত্রে দুধে জ্বাল দেন ৷ দুধ উথলে উঠলে তা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয় ৷

পয়লা বৈশাখের দিন রাজবাড়িতে থাকত ঢালাও ভূড়িভোজ ৷ সমস্ত প্রজাদের খাওয়ানো হত ৷ প্রজারা ওই দিন খাজনা শোধ করত রাজার কাছে ৷ রাজ্যের সমস্ত স্বর্ণকাররা তাঁদের হালখাতা বগলে ছুটতেন, রাজবাড়ির ঠাকুর দালানে হালখাতা ছুঁইয়ে আনার জন্য ৷ রাজবাড়িকে শুভ মানতেন প্রজারা ৷ রাজবাড়ি থেকে ওই দিন কেউ অভুক্ত ফিরতেন না ৷

কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি ও বারোদোল মেলা ৷

এর জন্য তিন দিন আগে থেকে রাজবাড়িতে বসত ভিয়েন, আসতেন দেশ-বিদেশের নামজাদা হালুইকররা, রাঁধুনী, ঠাকুর, বেয়ারা, খানসামায় গমগম করে উঠত রাজবাড়ির উঠোন ৷ সমানের বড় মাঠে সামিয়ানা টাঙিয়ে চলত রান্নাবান্না ৷ অন্যদিকে বসত মেলা ৷ বিকেলে একপ্রস্থ মিষ্টি আর ঠাণ্ডা সরবত খেয়ে শুরু হত কাব্য সম্মেলন ৷ রাতে বসত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর ৷

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
চোখের নিমেষে উধাও সাত কুইন্টাল দই! কেজি মাত্র ১১০ টাকা,ভাইফোঁটায় উপচে পড়া ভিড় এই দোকানে
আরও দেখুন

১৭২৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেছিলেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ৷ কিন্তু সংস্কৃতি মনস্কতায়, স্বকীয়তায়, সুশাসনে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিলেন তিনি ৷ এ দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর নাম ৷ আজও তাঁর তৈরি রাজবাড়ি, তাঁর সাম্রাজ্য, তাঁর হাতে শুরু হওয়া পুজো আধা-বিস্মৃতপ্রায় মহারাজার ঐতিহ্য নীরবে বহন করে নিয়ে চলেছে ৷

বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
১২ জায়গার ঠাকুর, হালুইকর, গো-বন্দনায় গমগম করত কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বর্ষবরণ
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল