১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একচেটিয়া লবণ তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা শুরু করে। অবিভক্ত মেদিনীপুরের তমলুক মহাকুমার নরঘাট ছিল ব্রিটিশদের নিমক মহাল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অবিভক্ত মেদিনীপুরের কাঁথি মহাকুমার উপকূলবর্তী এলাকা খেজুরি, হিজলি, বীরকুল, নন্দীগ্রাম, মহিষাদল ও নরঘাটে একচেটিয়া লবণ তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা শুরু করে। স্থানীয় এলাকাবাসীদের শ্রমিক হিসাবে কাজে লাগাত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৮০৪ সালে মলঙ্গী বিদ্রোহ শুরু হয় খেজুরীতে। লবণ শ্রমিকেরা ন্যায্য পারিশ্রমিক ও কাজের সময় কমানোর দাবিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। যার ঢেউ এসে পড়েছিল নরঘাটে। এখানকার লবণ শ্রমিকরাও বিদ্রোহ শুরু করে।
advertisement
১৯৩০ সালে গান্ধীজির ডান্ডি অভিযান শুরু করে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দেন। তমলুকে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়। তমলুকের লবণ সত্যাগ্রহীরা লবন তৈরির উদ্দেশ্যে তমলুক রাজবাড়ি থেকে নরঘাট এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। আইন অমান্য বা লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হলে তমলুক মহাকুমার ব্রিটিশ বাহিনী দমন-পীড়ন ও নেতাদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। তৎকালীন তাম্রলিপ্ত রাজা সুরেন্দ্র নারায়ণ রায় সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে লবণ সত্যাগ্রহীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য নিজের রাজবাড়ির একাংশ ছেড়ে দেয়। রাজবাড়ীর চত্বরেই লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সাধারণ মানুষ দলে দলে এসে নাম লেখায়। সত্যাগ্রহীদের এই রাজবাড়ি শিবিরে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের আচার্য হিসাবে সতীশ সামন্ত ও উপাচার্য হিসেবে সুশীল কুমার ধাড়া নির্বাচিত হয়।
১৯৩০ সালে এপ্রিল মাসে লবণ সত্যাগ্রহীরা তমলুক রাজবাড়ী থেকে নরঘাট যাত্রা করেছিল লবণ তৈরি করে ইংরেজদের লবণ আইন ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্য। লবন তৈরির প্রথম দিনই নরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সতীশচন্দ্র সামন্তকে। দ্বিতীয় দিন গ্রেপ্তার করা হয় অজয় মুখোপাধ্যায় সহ আরো অনেক লবণ সত্যাগ্রহীদের। তৃতীয় দিন লবন তৈরীর কাজে যুক্ত থাকার সত্যাগ্রহী দের ওপর ব্রিটিশ বাহিনী বর্বরোচিত আক্রমণ করে। ব্রিটিশ বাহিনী দমন-পীড়নে নরঘাটে লবন তৈরীর কাজে যুক্ত থাকা সত্যাগ্রহী রা ছত্রভঙ্গ হয়। বর্তমানে নরঘাট এর কাছাকাছি মগরাজ পুরে দীঘা হাওড়া রেল লাইনের একটি স্টেশন এর নামকরণ হয়েছে লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক স্টেশন নামে। বর্তমানে নরঘাট নন্দকুমার বিধানসভার অন্তর্গত।
-সৈকত শী