দিন দিন খারাপ হচ্ছিল রবি ঠাকুরের শরীর। ডাক্তাররা বার বার অস্ত্রপ্রচারের কথা বলছেন। কিন্তু কবির যা শরীরের অবস্থা তখন তাঁকে কোথাও নিয়ে গিয়ে অপারেশনটা করানো সম্ভব ছিল না। তখন জোড়াসাঁকোর মহর্ষিভবনে দোতালার পাথরের ঘরের পূবদিকের বারান্দায় তৈরি করা হয়েছিল অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার। পাথরের ঘরের পূর্বদিকের বারান্দায় অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার বানিয়েই করা হল অস্ত্রোপচার। এই খবর নীলরতন সরকারের কানে পৌঁছতেই তিনি ছুটে কলকাতা চলে আসেন !কিন্তু অস্তরপ্রচারের পরও সুস্থ হলেন না ঠাকুর। নীলরতন সরকার এসে কবিকে দেখলেন। কপালে হাত দিয়ে কি বুঝেছিলেন তা তিনিই জানেন। কাউকে কোনও কথা না বলে চলে গেলেন তিনি। হয়তো কবির দিন ফুড়িয়ে এসেছে তা তিনি বুঝেছিলেন। তবে এই অস্ত্রপ্রচারকে সমর্থন করেননি নীলরতন সরকার। আর তাই কোনও কথা না বলে হয়তো সেদিন চলে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় কবিকে দেখে অস্ত্রপ্রচার করাতেই বলেছিলেন।
advertisement
১৯৪১ সালের ২২শে শ্রাবণ সকাল ৯টায় কবিকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। শেষবারের মতো তাঁকে দেখে গেলন চিকিৎসক বিধান রায়, ললিত বন্দ্যোপাধ্যায়। কবির কানের কাছে চলছে অবিরাম মন্ত্রোচ্চারণ। কবির অক্সিজেনের নল একটু পরে খুলে দেওয়া হয়। ১২টা ১০ মিনিটে পুরোপুরি থেমে গেল হৃদস্পন্দন। সব কিছু সেদিনই শেষ। হাজার মানুষের চোখের জলে অন্য জগতে পারি দিয়েছিলেন রবি ঠাকুর। তবে কি সেদিনের অস্ত্রপ্রচার না করলে রবি ঠাকুর আরও কিছুদিন বাঁচতেন? আসলে মনে মনে কোথাও তিনিও হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে ঠাকুরের মৃত্যুতেই তিনি শেষ হয়ে যান না। তিনি বেঁচে থাকবেন সবার মধ্যে তাঁর লেখনির মধ্য দিয়ে। তিনিও আজও সমান প্রাসঙ্গিক ! চিরকাল থাকবেনও।
