শঙ্খচূড়, গোখরো, শাঁখামুটি। সাপুড়ের বিনের সুরে ঝাঁপি থেকে একে একে বিষধর সাপ ফণা তুলে বেরিয়ে আসে। দুর্গাদালান জুড়ে তখন সাপেদের আধিপত্য। তিনশো বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে পূর্ব বর্ধমানের কালনার বদ্যিপুরের নন্দীবাড়ির পুজোয়।
খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার। তিনশো বছরের ঐতিহ্যে সময়ের প্রলেপ। গুটি গুটি পায়ে এগিয়েছে সময়। পুজোর অস্থিমজ্জায় কালের বলিরেখা। তবু চিড় ধরেনি কৌলিন্যে। বরং সময়ের সঙ্গে আরও উজ্জ্বল ইতিহাস। গল্পেরা এখানে রূপকথা বোনে।
advertisement
কালনার বদ্যিপুরের বাসিন্দা শিশুরাম নন্দী জমিদারি পেয়ে তৈরি করেন বিশাল প্রসাদ। দুই চব্বিশ পরগনা, নদিয়া, হুগলি জুড়ে ছিল তাঁর জমিদারি। শালগ্রাম শিলা প্রতিষ্ঠার পর রাজরাজেশ্বরের মন্দির তৈরি করেন তিনি। পরিবারের মিথ, দুর্গাপুজোর আয়োজনে নাকি রুষ্ট হন মা মনসা। তাই দুর্গার পাশাপাশি মনসা পুজোও ইচ্ছে ছিল জমিদারের। তার আগেই দশমীর দুপুরে দুর্গাদালানে সাপ নিয়ে হাজির হন সাপুড়েরা। জমিদার ভাবেন, মা মনসাই তাদের পাঠিয়েছেন। সেই থেকেই দশমীতে সাপ খেলার প্রচলন।
বংশ পরম্পরায় আজও সাপ নিয়ে আসে সাপুড়ের দল। ঝুলিতে থাকে বিষধর শঙ্খচূড়, গোখরো, শাঁখামুটি। সাপুড়ের বিনের সুরে ফণা তোলে বিষধররা। ঠাকুরদালান জমে ওঠে সাপখেলায়।
সময়ের নৌকায় ভেসে হারিয়েছে হয়ত অনেক কিছুই। তবু ষষ্ঠী থেকে দশমী... বলি,ভোগ,নীলকণ্ঠ পাখির সাবেকিয়ানায় আজও যেন সময় থমকে দাঁড়িয়ে জমিদারবাড়ির উঠোনে। জমিয়ে পংতিভোজে, গল্পে, আড্ডায়, সাপখেলায় ...সাদামাটা পুজো কখন যেন হয়ে ওঠে বিশেষ।
