রাসমণির মধ্যে সত্ব আর রজোগুণের অদ্ভুত এক মিশ্রণ ঘটেছিল ৷ খুবই আচার পরায়ম ছিলেন ৷ ব্রহ্মচারিণীর মতো জীবনযাপন, আহারাদিতে ছিল কঠোরতা ৷ সামান্যতম ভোগ-বিলাসিতা ছিল না তাঁর মধ্যে ৷ আবার যখন তেজস্বিনী তখন তাঁর সামনে মাথা তুলে দাঁড়াবার ক্ষমতা ছিল না কারও ৷ এমনকী ফিরিঙ্গিদেরও নয় ৷ তাঁর রাজসিকতার প্রকাশ ঘটত বড় বড় উৎসবে ৷ খুব ঘটা করে পুজো উৎসবাদি করতেন ৷ শহরের মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যেত ৷ রানির কথা ছিল, যা হবে কখনও ছোটখাটো হবে না ৷ সকলকে নিয়ে উৎসব ৷ আর উৎসব উপলক্ষ্যে যতোটা পারা যায় মানুষের সেবা করার প্রবণতা ৷ ‘আমি এক রানি, যে সদাই তোমাদের পাশে আছে৷’
advertisement
একদিন তাঁর প্রিয় জামাতা মথুরমোহনকে ডেকে বললেন, ‘‘মথুর, আমার ইচ্ছে হয়েছে রুপোর রথ আরোহণ করিয়ে প্রভুকে কলকাতার রাজপথে ভ্রমণ করাবো ৷ ঝকঝকে রুপোর রথ ৷’’ মথুর বললেন, ‘‘ঠিক আছে ৷ আমি আজই বিখ্যাত সাহেব জহুরী হ্যামিলটন কোম্পানিতে অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি ৷’’ রানি মৃদু হেসে মিষ্টি গলায় বললেন, ‘‘দেশি কারিগর থাকতে বিদেশি কারিগর থাকতে বিদেশির কাছে যাবে কেন?’’
মথুরমোহন কলকাতার উদীয়মান বড়লোক ৷ ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ৷ প্রিন্সের বন্ধু ৷ একটু থমকে গেলেন ৷ বললেন, ‘‘বেশ তাই হোক’৷ দেশি কারিগর ডাকা হল ৷ ঠিক সময়ে রথ প্রস্তুত ৷ প্রভূত আড়ম্বর স্নানযাত্রার দিন রথ প্রতিষ্ঠা হল ৷ তৈরি করতে যা খরচ হল সেকালের হিসেবে মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো ৷ এক লক্ষ বাইশ হাজার একশো পনেরো টাকা ৷ রথের দিন জামাইরা খালি পায়ে রথের আগে আগে চললেন ৷ রানির নাতি-নাতনিরা বিভিন্ন রকম গাড়ি চড়ে রথের পিছনে, এরপরে বিরাট শোভাযাত্রা ৷ কলকাতার মানুষ একটা সমারোহ দেখল বটে!