মাইক্রোসফট-এর সিনিয়র ম্যানেজারের চাকরি, মোটা অঙ্কের মাইনে, আলিশান লাইফস্টাইল... সব একরাতের সিদ্ধান্তে ছেড়ে দিলেন ? ভয় লাগল না?
বিশাল রিস্ক নিয়েছিলাম, কিন্তু ভয় পাইনি! আসলে মনের ভিতরের টানটা মারাত্মক ছিল!
কিসের টান?
মাইক্রোসফট-এ যত প্রোগ্রাম কোড লিখেছিলাম সেগুলো ভার্সন ২.০। একদিন সেগুলোর জায়গায় অন্য প্রোডাক্ট আসবে! কিন্তু আমার গল্প থেকেই যাবে। এটা কোথাও অনুভব করেছিলাম, মানুষ আমায় আমার লেখার জন্য চেনে, আমার বানানো প্রোগ্রাম কোডের জন্য নয়। বুঝেছিলাম, যদি সেদিন ছাড়তে না পারি, কোনওদিন পারব না। আজ পাঁচ বছর কেটে যাওয়ার পর আমি খুশি! সব মানুষ স্বপ্ন দেখে! কিন্তু তারপর হয় ভুলে যায়, নইলে পিছিয়ে আসে! এখানেই ভুল করে। স্বপ্নকে বাঁচিয়ে তোলা খুব জরুরি। মাইক্রোসফট আমার স্বপ্নের কোম্পানি ছিল! কিন্তু জীবনের একটা মোড়ে খোদ জীবনকেই উত্তর দিতে হয়-- আমার কাছে সাফল্যর সংজ্ঞা কী? সাফল্য মানে শুধু টাকা রোজগার নয়। সাফল্য মানে সেই জীবনটা পাওয়া যেটা আপনি মন থেকে পেতে চান।
advertisement
কিন্তু আপনি তো ছোট থেকে লেখালেখির জগতে ছিলেন না! আচমকাই এই টানটা অনুভব করলেন?
তখন আমাত তৃতীয় বই প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। মাইক্রোসফটেই কাজ করছি! একদিন ভাবলাম, আচ্ছা, মানুষ তো আমায় আমার লেখার জন্য চেনে! অথচ দিনে লেখার জন্য বরাদ্দ মাত্র ১ ঘণ্টা! বাকি ৮ ঘণ্টা সেই কাজ করি যার জন্য খুব বেশি হলে ১ শতাংশ মানুষ আমায় চেনে। এইখান থেকেই একটা আইডেনটিটি ক্রাইসিস তৈরি হতে শুরু করল! এরকমই একটা সময়ে এক রবিবার জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে শয়ে শয়ে লোক আমার থেকে বই সাইন করানোর জন্য দাঁড়িয়ে! একবার কথা বলতে, অটোগ্রাফ নিতে বা সেলফি তোলার অপেক্ষায়! পরের দিন হায়দ্রাবাদে পৌঁছিয়ে অফিসে ঢুকতেই বস বললেন, আচ্ছা তোমার আমাকে যে এমওএম পাঠানোর ছিল, সেটার কী হল? মাথায় বিশাল একটা ধাক্কা লাগল! একদিকে হাজার হাজার মানুষ আমায় চাইছে, অন্যদিকে বস আমার থেকে এমওএম চাইছে...! সেদিন সন্ধেবেলাই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম! জানতাম চাকরিতে অনেক টাকা, বই লিখে সেই টাকা হয়তো কখনও রোজগার করতে পারব না ! কিন্তু কোথাও আমার এই 'ফেম' টা পছন্দ হতে লাগল! তাই রিস্কটা নিয়েই ফেললাম। এবং আজ কিন্তু শুধুমাত্র লিখেই আমি চাকরির থেকে বেশি রোজগার করি।
আপনার প্রথম বই 'আই টু হ্যাড আ লাভস্টোরি' বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিল, আজও সমান চাহিদায়...
এই লেখাটায় আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম, একজন পুরুষও ইমোশনাল হতে পারে। সেও ভাবতে পারে, সেক্স-ই সব নয়, সেক্স অপেক্ষা করতে পারে, সে শুধু তার ভালবাসাকে জীবনে চায়। একজন পুরুষও তাঁর গার্লফ্রেন্ডকে এতটাই ভালবাসতে পারে যে, সে আর বেঁচে নেই জেনেও সে জীবনে এগিয়ে যায়নি। তাঁর স্মৃতি আঁকড়েই রয়ে গিয়েছে। সে তাঁকে নিয়ে বই লিখে ফেলে। আর যখন কোনওকিছুর জন্ম খুব সততার সঙ্গে হয়, তখন তা মানুষের মন ছোঁবেই!
'আই টু হ্যাড আ লাভস্টোরি' তো আপনার জীবনের গল্প...
খুশি, আমার বান্ধবীকে আমি পথ দুর্ঘটনায় হারিয়েছিলাম। আমি সেই দুঃখটা নিজের মধ্যে চেপে না রেখে সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছিলাম। আমার লাভ স্টোরিকে জীবন্ত রাখতে চেয়েছিলাম। নিজের মতো করে খুশিকে আবার এই পৃথীবিতে ফিরিয়ে আনার একটা প্রচেষ্টা! অনেকে এই লেখাটাকে বলে, 'মডার্ন ডে তাজমহল বিল্ট বাই অ্যান এমপেরর ফর হিজ বিলাভেড'! আমার টাকা ছিল না তাজ বানানোর, তাই গল্প লিখেছিলাম। তখন জানতামও না আমি আদৌ লিখতে পারি! মনের ভিতর থেকে প্রতিটা শব্দ বেরিয়ে এসেছিল।
আপনার কী মনে হয়, এই প্রজন্ম ভালবাসা বোঝে?
গোটা প্রজন্ম নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না, কারণ সেখানে অনেক বৈচিত্র্য আছে! কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, এই প্রজন্মে কী এমন মানুষ আছে যারা ভালবাসাকে মূল্য দেয়? আমার উত্তর অবশ্যই হ্যাঁ হবে! কিন্তু একই সঙ্গে এখন ছেলে মেয়েদের মধ্যে একটা সোশাল প্রেশার এসে গিয়েছে--ক্লাস এইট, নাইন থেকে একে অপরকে প্রশ্ন করে, 'আর ইউ সিঙ্গল?' সিঙ্গল থাকাটা যেন লজ্জার! প্রেমে পড়ার ইঁদুর দৌড়ে নাম লেখাচ্ছে। ২০ বছর আগে কলেজে প্রেম শুরু হত, এখন সেটা স্কুলে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রেমের জীবনটাও কমে গিয়েছে। যত তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ছে তত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসছে। মুহুরমুহ ব্রেক-আপ, ডিভোর্স । এখন এমন কাউকে প্রায় পাওয়াই যায় না, যাঁর প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকা নেই! সম্পর্কর ব্যাপারে আমাদের আরও অনেক ম্যাচিওর হওয়া উচিৎ!
আপনি সবসময় রোম্যান্সের মধ্যে দিয়ে সামাজিক বার্তা দেন! অন্য কোনও জঁর বাছেন না কেন?
আমি সেটাই লিখি যেটা 'ফিল' করতে পারি। আমার সব লেখাই হয় নিজের জীবন, নয় চারপাশের মানুষের জীবন নিয়ে! আই হ্যাভ টু লিভ দ্য স্টোরি টু রাইট ইট! এখনও পর্যন্ত 'ফিকশন' বা 'হরর'...এই জঁর গুলো খুব একটা অনুভব করিনি!
তবে, মে মাসে আমার যে উপন্যাসটা প্রকাশিত হচ্ছে সেটা রোম্যান্টিক নয়, তাতে কোনও মেয়েই নেই! চার বন্ধুর বন্ধুত্বের গল্প। ফ্রেন্ডশিপ জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক যেটা আমরা মাঝেমাঝেই আন্ডারএস্টিমেট করি! বিশেষ করে যখন জীবনে প্রেম আসে! কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, প্রেম ধোকা দিলে কাঁদার জন্য বন্ধুর কাঁধটাই পাওয়া যায়!