যযাতি, বরিশালের যোগেন মন্ডল, মানুষ খুন করে কেন, মফস্বলী বৃত্তান্ত , তিস্তাপারের বৃত্তান্ত, সময় অসময়ের বৃত্তান্ত , লগন গান্ধার, হাড়কাটা দুপুর, নিরস্ত্রীকরণ, উদ্বাস্তু–র সাহিত্যিকের মুগ্ধ পাঠক বুদ্ধদেব গুহ।। বুদ্ধদেব বাবুর কথায় , ‘দেবেশ ছিল একনিষ্ঠ সাহিত্যিক। ওর মধ্যে কোনও ভেজাল ছিল না। একটু বিশেষ দল ও মতকে নিঃস্বার্থ সমর্থন করত। দেবেশের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ছিল।’
advertisement
১৯৯০ সালে অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাওয়ার জন্য দেবেশ রায়ের 'তিস্তাপারের বৃত্তান্ত' র সঙ্গে সঙ্গে তাঁর লেখা ‘মাধুকরী’–ও মনোনীত হয়েছিল। সেই স্মৃতি রোমন্থন করলেন বুদ্ধদেব গুহ।
‘দেবেশ আমার সমসাময়িক ছিলেন। তবে কট্টর কমিউনিস্ট হওয়ায় একটি বিশেষ পত্রিকার সাহিত্যিকরা তাঁকে গণ্যমান্য করতেন না। কিন্তু ১৯৯০ সালে আমার মাধুকরী আর দেবেশের তিস্তাপারের বৃত্তান্ত অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাওয়ার জন্য তালিকায় ছিল তখন সেই পত্রিকারই যাঁরা আমাকে একদম পছন্দ করত না তাঁরাই আবার দেবেশের লেখার প্রশংসা করেছিল। তখন ও অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাওয়ায় আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম। সত্যিকারের ভালো বই তিস্তাপারের বৃত্তান্ত। মনে আছে ঠিক পরের বছর বইমেলায় দেখছিলাম একটি প্রকাশনী সংস্থার স্টলের সামনে একজন লোককে বই চুরি করার অপরাধে মারধর করা হচ্ছে। আমি দেবেশের তিস্তাপারের বৃত্তান্ত চুরি করেছে জানতে পেরে বলেছিলাম, যে লোক তিস্তাপারের বৃত্তান্ত চুরি করে সে কখনো চোর নয়। সে অত্যন্ত ভালো পাঠক। আমি বইয়ের দাম দিয়ে বইটা ওকে দিয়ে দিতে বলেছিলাম।’
দেবেশ রায়ের খুব বেশি লেখা পড়ে উঠতে পারেননি বুদ্ধদেব গুহ। যেটুকু পড়েছেন তাঁর মধ্যে তিস্তাপারের বৃত্তান্তই সবচেয়ে বেশি দাগ কেটে গিয়েছিল। তাঁর মতে, শুধুমাত্র এই উপন্যাসের কারণেই বাংলা সাহিত্যে চিরকালীন হয়ে থাকবেন দেবেশ রায়। বুদ্ধদেব গুহর কথায়, ‘পেশাগত কারণে দেবেশ বা অন্য লেখকদের সব লেখা পড়ে উঠতে পারিনি। ও একটা ম্যাগাজিন করত। যেখানে উত্তরবঙ্গ নিয়ে অনেক লেখালেখি থাকত। আমি পড়েছি। আমি নিজেও সেখানে দু–একবার লিখেছি। সে প্রসঙ্গে চিঠিও লিখেছে আমায়। মনে পড়ে যাচ্ছে সেসব কথা। মানুষদের নিয়ে লেখা তিস্তাপারের বৃত্তান্ত। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেমন ‘হোসেন মিঞা’ তেমনই তিস্তাপারের বৃত্তান্তর ‘বাঘারু’। অসাধারণ চরিত্র। তিস্তাপারের বৃত্তান্ত নিজগুণেই বাংলা সাহিত্যে চিরস্থায়ী আসন পাবে।'
স্মৃতিচারণার মাঝে হঠাৎই বিষন্নতা বুদ্ধদেব গুহর গলায়। ‘মনটা খারাপ হয়ে গেল। ওদিকে শীর্ষেন্দু আছে। ব্যাট করছে ভাল। আমাদের সমসাময়িক আর কেউই তো রইল না। আমি ভাল নেই। ছোটবেলার বন্ধু চুনীও চলে গেল দিন কয়েক আগে। আমি তো একাই রইলাম এবার লাইনে।’
DEBAPRIYA DUTTA MAJUMDAR