অনাথবাবুর মন ভাল নেই৷ চুপচাপ বসে থাকেন৷ মাঝেমধ্যেই আশপাশের কিছু বিড়ালকে ঘুরে বেড়াতে দেখেন৷ বাড়ির লোক কেউ তাঁর এই কথায় বিশ্বাস করেন না (Change in Behavior)৷ এরই সঙ্গে বাড়ছে তাঁর সন্দেহ বাতিক৷ বাড়ির পরিচারক থেকে স্ত্রী, সকলকেই উনি সন্দেহের চোখে দেখেন৷ মনে করেন যে তাঁর আলমারি থেকে সকলেই নাকি টাকা চুরি করছেন৷ আর এরই সঙ্গে কোনও কিছুই মনে রাখতে পারেন না৷
advertisement
এরা দু’জনেই ভুগছেন ডিমেনশিয়ায় (Dementia), অর্থাৎ ভুলে যাওয়া রোগে৷ পরিসংখ্যান বলছে যে দেশে প্রায় ২.৭ শতাংশ মানুষ এই মানসিক রোগের শিকার৷ World Alzheimer's Day বা বিশ্ব অ্যালজাইমার দিবসে এই রোগে ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিন৷ কারণ দিনদিন বাড়ছে অ্যালজাইমার রোগের প্রকোপ৷
৮০ বছর বা তার উর্দ্ধে ২০ শতাংশ মানুষের জীবনে ডিমেনশিয়ার কোপে পড়তে পারেন৷ একদিকে যেমন বেঁচে থাকার সমসসীমা দীর্ঘ হচ্ছে, তেমনই বেড়ে চলেছে বার্ধক্যজনিত নানা রোগ৷ পরিসংখ্যান থেকে উঠে আসছে যে উন্নত দেশগুলির থেকে উন্নয়নশীল দেশে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি৷ ৬৬ বছর পার করার পরই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়৷
চিকিৎসক যশোধারা চৌধুরী (Dr. Joshodhara Chowdhury) বলছেন, আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা অপরিসীম৷ শরীরে সামান্যতম অনুভূতি সঞ্চারিত হয় মস্তিষ্কের অঙ্গুলিহেলনে৷ তাই মস্তিষ্কের ক্ষয়রোগ অর্থাৎ ডিজেনারেশন (Degenration) যখন শুরু হয়, তখনই এই ডায়মেনশিয়া (Dementia) চেপে বসে৷
ডায়মেনশিয়ার (Dementia)নানা প্রকার ভেদ রয়েছে৷ উপসর্গ হিসেবে তার দু’টি ভাগ করা যায়৷ Anterior Dominant অর্থাৎ মস্তিষ্কের আগের ভাগের অসুখ আর Posterior Dominant অর্থাৎ মস্তিষ্কের পিছনের ভাগের অসুখ৷ যে Alzeimer Disease-র নাম শুনলেই আঁতকে উঠি আমরা, তা আদতে অ্যান্টিরিয়ার ডমিনেন্ট (Anterior Dominant) ডায়মেনশিয়ার মধ্যে পরে৷ যা শুরু হয় ভুলে যাওয়া দিয়ে৷ প্রথমে মানুষের নাম, জিনিষের নাম ভোলার রোগ শুরু হয় যা ধীরে ধীরে বড় আকার নেয়৷ তারপর শুরু হয় কথার খেই হারিয়ে ফেলা৷ এরই সঙ্গে অন্যের কথা ঠিকভাবে শুনতে না পারা বা সেই অক্ষমতায় কথাই কম বলা লক্ষ্য করা যায় রোগীর মধ্যে৷ এরপরই আশপাশে পূর্বপরিচিত পথ চিনতে না পারার সমস্যা হয়৷ যা পরে এতটাই বেড়ে যায় যে, দৈনন্দিন জীবনযাপনে সাহায্যের প্রয়োজন হয়৷
আরও এক ধরন হল Frontotemporal Dementia যা মানুষের ব্যবহারে পরিবর্তন এনে দিতে পারে৷ খুবই গম্ভীর স্বভাবের মানুষ এই রোগের ফলে চিৎকার করে কথা বলতে শুরু করতে পারেন বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতে পারেন৷ একে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় Loss of Inhibition৷ অন্যদিকে পস্টিরিয়ার ডমিন্যান্ট (Posterior Dominant) ডিমেনশিয়া হলে মানুষের Hallucination হয়৷ অর্থাৎ উনি যা দেখছেন, তা আদতে সঠিক নয়৷ একই সঙ্গে সন্দেহপ্রবণতা প্রবল হয়৷
কীভাবে বোঝা যাবে এই রোগের সূত্রপাত? কীভাবেই বা চিকিৎসা সম্ভব?
ডাঃ যশোধারা চৌধুরী জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রিয়জন (স্বামী-স্ত্রী) বিয়োগের পর এই ধরণের সমস্যা দেখা যায়৷ কোনও রকম লক্ষণ নজরে আসলেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে৷ মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এধরনের মানসিক রোগও৷ তাই সামাজিক সচেতনতা খুবই প্রয়োজন৷ সঙ্গে চাই সংবেদনশীলতা৷ না হলে এমন রোগে ভুগতে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়ানো যাবে না৷ আর একার পক্ষে এই রোগ মোকাবিলা করা কখনওই সম্ভব নয়, কারণ রোগী বুঝতেই পারেন না যে তাঁর মস্তিষ্কে গভীরভাবে ছাপ ফেলছে দুরুহ ব্যাধি৷
(Input-Dr. Joshodhara Chowdhury, Neorologist)