সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এই বিষয়টি কোথাও যেন নাড়া দেয়। তবে বাংলার রাজনীতি আর এই খুনোখুনির ঘটনা কিন্তু ষাট-সত্তরের দশক থেকে আজও বর্তমান। তা সে প্রকাশ্যে যাদবপুরের উপাচার্য খুন হোক বা নৃশংস সাঁইবাড়ির হত্যাকাণ্ড। এখানেই শেষ নয়। মারিচঝাপি হামলা, কালিম্পং হামলা, নানুর হামলা- তালিকাটা অনেকটাই দীর্ঘ। বিজন সেতুর জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ভোলেনি কেউ। কিন্তু কোনওটিতেই তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। ২০১৮ সালের শেষের দিকে রাজনৈতিক খুনের ক্ষেত্রে শিরোনামে উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গ। পরের দিকে ২০১৯ বা ২০২০ সালে এ নিয়ে আবার তথ্য চেপে যায় রাজ্য প্রশাসন। সূত্রে খবর, NCRB-কে রিপোর্ট দিতে চায়নি রাজ্য। আর সত্যি কথা বলতে গেলে এখন যেন গোটা রাজ্যে বোমার রাজনীতি চলছে। রেহাই পাচ্ছে না সাধারণ মানুষও।
advertisement
রাজনৈতিক হিংসার ক্ষেত্রে বাংলা ও কেরল নিয়ে কেন এত মাতামাতি? এদিক থেকে দেখতে গেলে বাম জমানার আমলে নব্বইয়ের দশকে একটু থিতিয়ে ছিল রাজনৈতিক হিংসা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেটা জানতেন। ১৯৯৩ সালে বিরোধী নেত্রী হিসেবে রাইটার্স অভিযান চালান। রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। ১৩ জনের মৃত্যু হয়। মমতা নিজেও জখম হন। এর পর নানা ইস্যুতে বাম-তৃণমূল বা তৃণমূল-বিজেপি রাজনৈতিক সংঘর্ষ হিংসাত্মক রূপ নিয়েছে। যা আজও বার বার নানা ভাবে ফিরে আসছে। এর জেরে এক সময়ে বিরোধী দলকেও দুর্বল এমনকি নিশ্চিহ্ন হতে দেখা গিয়েছে। যা কোথাও না কোথাও গিয়ে গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোট সিটের প্রায় এক তৃতীয়াংশে কোনও বিরোধী প্রার্থীকে দেখা যায়নি।
এক্ষেত্রে বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে কোথাও যেন তিনটি বিষয় সরানো দরকার। প্রথম বিষয়টি হল রাজনৈতিক হিংসা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বোমাবাজি থেকে শুরু করে একের পর এক রাজনৈতিক নেতা খুন। আদর্শের নামে সাধারণ মানুষও নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। গত বছর বীরভূমের একটি ট্রাক থেকে ৩৯,০০০ বিস্ফোরক পদার্থ উদ্ধার হয়েছিল। আজকাল যেন এই বিষয়টি খুব সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হল একটি তথাকথিত আভিজাত্যের ছবি তৈরি করা। যা মূলত কলকাতা ঘিরেই আবর্তিত। বার বার কলকাতার রাজনৈতিক দর্শনই যেন রাজ্য রাজনীতির উপজীব্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রত্যন্ত এলাকাগুলি অর্থাৎ পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, জঙ্গলমহলের ছোট ছোট এলাকা কোথাও যেন শুধু ভোটে জেতার ইস্যু হয়েই থেকে যায়।
তৃতীয় তথা একটি নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। বহিরাগত। বর্তমানে এই শব্দটির রমরমা। কোথাও না কোথাও একটা সংস্কৃতিগত পার্থক্য তৈরি করারও চেষ্টা চলছে। তা সে মারোয়াড়ি সম্প্রদায় হোক বা ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে আসা লোকজন। হিন্দিভাষী নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বিষয়টি মাথাচাড়া দিয়ে উড়েছে। দুর্গা আর রাম পূজার মাঝেও এসে গিয়েছে এই বিভাজন। এমনকি ২০১৯ সালে NRS-এর আন্দোলনের সময়ও এই বহিরাগত শব্দটি নিয়ে নানা জল্পনা হয়।
এবার সবার পাখির চোখ বিধানসভা নির্বাচনের দিকে। আপাতত ফলাফলের অপেক্ষা।
(প্রতিবেদনটির লেখক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মতামত একান্ত ব্যক্তিগত।)