১২-১৯ বছর বয়সীদেরও এই টিকা দেওয়া হবে: এই মুহূর্তে টিকাটি শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের দেওয়া হবে যতক্ষণ না উৎপাদন ক্ষমতা জোরদার করতে সক্ষম হয় নির্মাতা সংস্থা। কল্যাণের ফর্টিস হাসপাতালের চিকিৎসক সন্দীপ পাতিলের মতে, পরবর্তীতে এই টিকা কিশোর-কিশোরীদেরও দেওয়া হবে। ১২ ও তার বেশি বয়সীদের প্রয়োগের জন্য জাইকোভ-ডি-কে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় আপাতত শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের এই টিকা দেওয়া হবে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্দাভিয়া (Mansukh Mandaviya) সংসদে জানিয়েছেন যে শিশুদের টিকাকরণের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চায় না কেন্দ্র। তিনি বলেন, "বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বাচ্চাদের টিকাকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিশুদের টিকাকরণের আগে আমরা ভাবনা-চিন্তা এবং পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ ওরাই দেশের ভবিষ্যৎ। এই বিষয়ে আমাদের সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।"
advertisement
ভারতের প্রথম সূচবিহীন টিকা: আহমেদাবাদের জাইডাস ক্যাডিলার তৈরি এই টিকা অন্যান্য টিকার থেকে আলাদা। কারণ এই টিকা দিতে সূচের ব্যবহার করতে হবে না। ত্বকের নিচে একটি হাই প্রেসার জেট ব্যবহার করেই টিকা দেওয়া যাবে। ফার্মাজেট (PharmaJet) নামে একটি সংস্থার তৈরি ডিভাইসের সাহায্যে এই টিকা দেওয়া হবে। সূত্রের খবর, জাইকোভ ডি-র প্রথম ডোজের ২৮ দিনের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ এবং ৫৬ দিনের মাথায় তৃতীয় ডোজ দেওয়া হবে। নির্মাতারা কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রতি ডোজ টিকা ৩৭৬ টাকায় (জিসটি ও অন্য খরচ নিয়ে) বিক্রি করবে। দাম ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে রাখতে চাইছে। তিনটি ডোজের দাম পড়বে ১ হাজার ১২৮ টাকা। জাইডাস ক্যাডিলার এই টিকা এখনই দেশ জুড়ে ব্যবহার করা হবে না। প্রথমে সাতটি রাজ্যে জাইকোভ-ডি পাওয়া যাবে বলে এক শীর্ষ সরকারি কর্তা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন - ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কি লড়তে পারবে ভারতে ব্যবহৃত টিকাগুলি? কী জানা যাচ্ছে
জাইকোভ-ডি হল বিশ্বের প্রথম DNA-প্লাজমিড টিকা: এটিই বিশ্বের প্রথম কোভিড টিকা, যা প্লাজমিড ডিএনএ প্ল্যাটফর্মে তৈরি করা হয়েছে আর বাণিজ্যিকভাবে চালু করা হয়েছে। ডিএনএ-প্লাসমিড ভ্যাকসিন কী তা বোঝার জন্য, আমাদের বুঝতে হবে যে বেশিরভাগ টিকা সংক্রামক এজেন্টের দুর্বল বা মৃত ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এই ক্ষেত্রে, অ্যান্টিজেনগুলির জন্য জিন ধারণকারী ডিএনএ-র একটি অংশ শরীরে ইনজেকশনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি শরীরকে অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয় তা শিখতে সহায়তা করে। তাই যখন প্যাথোজেন আক্রমণ করে, তখন শরীর কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে।
এই টিকার কার্যকারিতা হার কী?
তৃতীয় ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের (Clinical Trials) প্রাথমিক ফলাফল দেখিয়েছে যে এই টিকা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ৬৬.৬ শতাংশ কার্যকর। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে যে ট্রায়ালে টিকা নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের কেউই গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়নি বা মারা যায়নি। তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল সারা দেশে ৫০টি সাইটে চালানো হয়। ২৮ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন। দেশে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যখন শিখরে ছিল, সেই সময়ে ট্রায়াল চলেছিল। তাই জাইডাস ক্যাডিলা আত্মবিশ্বাসী ছিল যে তাদের এই টিকা করোনার নতুন মিউট্যান্ট স্ট্রেন, বিশেষ করে ডেল্টার বিরুদ্ধে কার্যকারিতা দেখাবে। যদিও জাইকোভ-ডি-র কার্যকারিতার হার অন্যান্য নিউক্লিক অ্যাসিড টিকার তুলনায় যথেষ্ট কম।
চিকিৎসক সন্দীপ পাতিল (Sandeep Pati) জানিয়েছেন, ট্রায়াল থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, এই টিকাটি কার্যকারিতা দেখিয়েছে। এই টিকা ডেল্টা প্রজাতির বিরুদ্ধেও লড়াই করে। কারণ সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা পঞ্চাশটিরও বেশি ক্লিনিকাল সাইটে ট্রায়াল চলাকালীন জাইকোভ-ডি নতুন মিউট্যান্ট স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা দেখিয়েছে, বিশেষ করে ডেল্টা প্রজাতির বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন- দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কি থাকে? জানুন ও সতর্ক হোন
জাইকোড-ডি কী ধরনের টিকা?
জাইডাস ক্যাডিলার এই শট একটি শ্রেণীর অন্তর্গত, যা জেনেটিক বা নিউক্লিক অ্যাসিড টিকা নামে পরিচিত। এই টিকা ভাইরাসের জিনগত তথ্যের একটি অংশ শরীরে ঢুকিয়ে দিয়ে কোষগুলিকে ভাইরাসের একটি মূল উপাদান স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে প্ররোচিত করে। যা নভেল করোনাভাইরাস মানবকোষ আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করে। ইমিউনো সিস্টেম অ্যান্টিবডি তৈরি করে এই স্পাইক প্রোটিনকে চিনে নেয় এবং আক্রমণ করে। জেনেটিক টিকা আরএনএ -র উপর ভিত্তি করে তৈরি করা যেতে পারে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত ফাইজার (Pfizer) এবং মডার্নার (Moderna) টিকা।
জেনেটিক টিকা কতটা নিরাপদ?
জেনেটিক টিকাগুলি ব্যবহারের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়। কারণ এগুলি ভাইরাসের জীবন্ত উপাদান ব্যবহার করে উৎপাদিত হয় না, তাই সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। এই ধরনের টিকা তৈরির জন্য মূল ভাইরাসের জেনেটিক তথ্য ব্যবহার করা হয়। এই টিকা এনকোড করা কিছু জেনেটিক তথ্য ব্যবহার করে মাত্র। একবার ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্স করা হলে, এটি বেশ সহজেই উৎপাদন করা যেতে পারে। সার্স-কোভ-২-র জিনোম সিকোয়েন্সড হওয়ার দু'মাসের মধ্যে মডার্নার আরএনএ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়। জাইডাস ক্যাডিলা বলেছে যে তাদের টিকা ভবিষ্যতের যে কোনও ভাইরাস মিউটেশনকে টার্গেট করতে পারে। জাইডাস ক্যাডিলা ছাড়াও সারা বিশ্বে আরও বেশ কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ডিএনএ ভ্যাকসিন আবিষ্কার করছে। জাপানি বায়োটেকনোলজি কম্পানি অ্যাঞ্জেস এবং ইউএস-ভিত্তিক ইনোভিও তাদের মধ্যে অন্যতম।
কী ভাবে ইনজেকশন ছাড়া টিকা দেওয়া হবে?
জাইকোভ-ডি হল একটি 'ইন্ট্রাডার্মাল ভ্যাকসিন' যা একটি 'নিডল-ফ্রি সিস্টেম' ব্যবহার করে প্রয়োগ করা হয়। যাতে কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস পায়। সূচ আতঙ্কে অনেকেই টিকা নিতে চাইছে না, এটা প্রক্রিয়া তাদের উদ্বেগ কাটাবে। মার্কিন সংস্থা ফার্মাজেট, যার ট্রপিস নিডল-ফ্রি-ইনজেক্টর ব্যবহার করে জাইকোভ-ডি টিকা দেওয়া হবে। সংস্থাটি জানিয়েছে যে তাদের ডিভাইসটি একটি সঙ্কীর্ণ, সুনির্দিষ্ট তরল প্রবাহ সৃষ্টি করে, যা ওষুধ বা টিকাকে ত্বকে পৌঁছে দেয়। এই প্রযুক্তি চল্লিশের দশক থেকে চলে এসেছে। সংস্থাটি বলেছে যে এটির ব্যবহার নিরাপদ এবং কার্যকর করতে একে আরও উন্নত করা হয়েছে।