নয়াদিল্লি: সম্প্রতি টিভি অ্যাঙ্কর ও সাংবাদিক রুবিকা লিয়াকতের একটি ট্যুইট নিয়ে যথেষ্ট চর্চা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি চিঠি উদ্ধৃত করে তিনি ট্যুইট করেছিলেন এবং অত্যন্ত কঠিন এবং দুঃখের সময় তাঁকে সাহায্য করার পাশাপাশি উৎসাহ দেওয়ার জন্যও প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ধন্যবাদ জানান। রুবিকার মা ডাঃ ফাতমা লিয়াকত প্রয়াত হয়েছেন গত ২৮ মে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর পাঠানো শোকবার্তায় প্রয়াত ডা. ফাতমা লিয়াকতের ব্যক্তিত্বকে উল্লেখ করে তাঁর সম্পর্কে অনেক কথাই লিখেছিলেন।
advertisement
রুবিকার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় চার বছর আগে ৷ মিডিয়া সংস্থার আলাদা আলাদা চ্যানেলের জন্য কাজ করছিলাম আমরা৷ লিফটে অনেকসময়েই আমাদের দেখা হয়ে যেত। ওঁর মায়ের মৃত্যুর পর রুবিকাকে ফোন করা উচিত বলেই মনে করেছিলাম ৷ কারণ কারোর মা-কে হারানোর মতো ক্ষতি দুনিয়ায় আর কোনও কিছুতেই নেই ৷
সাংবাদিক রুবিকা লিয়াকতের মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মোদি
রুবিকাকে ফোন করার পর আমি জানতে পারি, প্রধানমন্ত্রী কেন এই চিঠিটা লিখেছিলেন ৷ মে মাসের ২ তারিখে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন রুবিকার মা ফাতমা লিয়াকত। রুবিকা যখন তাঁর মায়ের অসুস্থতার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন, তখন তিনি নয়ডা থেকে উদয়পুরে তড়িঘড়ি পৌঁছন, যেখানে তাঁর পরিবার থাকেন। মা ফাতমা লিয়াকত জীববিজ্ঞানে পিএইচডি করার পরে দীর্ঘদিন ধরে জলে বসবাসকারী প্রাণীদের উপর ক্ষতিকারক ধাতবগুলির প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে আসছিলেন। মায়ের অসুস্থতার প্রথম দিনগুলিতে রুবিকার মনে হয়েছিল হয়তো রমজানের রোজার কারণে Gastroenteritis-এর সমস্যায় ভুগছেন ৷ যেখানে লোকেরা সাধারণত বমি করে। কিন্তু স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটে, কিডনি, যকৃত এবং হার্টেও তার মারাত্মক প্রভাব দেখাতে শুরু করে, পরিস্থিতি মাল্টি অর্গান ফেলিওরের মতো হতে শুরু করে। মনে করা হচ্ছিল করোনার কারণে শরীরে এই ধরণের জটিলতা দেখা গিয়েছে ৷ কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর দেখা যায়, যে রুবিকার মায়ের প্যানক্রিয়াটাইটিস হয়েছে ৷ এই রোগ অগ্ন্যাশয়ের গুরুতর ক্ষতি করে ৷
এই রোগ অত্যন্ত কঠিন এবং গুরুতর ৷ এবং মায়ের অবস্থা যে ভালো নেই. তা বুঝতে এরপর বেশি সময় লাগেনি রুবিকা এবং তাঁর ছোট বোন অঞ্জুমের ৷ এরপর ইদ চলে এলেও, এবছর তা অত্যন্ত খারাপই কেটেছে লিয়াকত পরিবারের ৷ উদয়পুরের একটি হাসপাতালের আইসিউ-তে মায়ের বেডের পাশেই অধিকাংশ সময় কেটেছে রুবিকাদের ৷
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে তাঁকে সরাসরি ফোন করবেন, তা কল্পনাও করেননি রুবিকা
প্রধানমন্ত্রীর ফোন পেয়ে অবাক হয়ে যান রুবিকা ৷ করোনা অতিমারীর মধ্যে যখন বিপদের সময়ে আত্মীয়স্বজনরাই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি ৷ তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ফোন করে রুবিকার মায়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে চান ৷ পুরো বিষয়টি জানার পরে আইসিইউয়ের বিছানায় শুয়ে থাকা ফাতমা লিয়াকতের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন মোদি। তখন মায়ের হাতে ফোন দেন রুবিকা ৷ সেইসময়ে ফোনে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না রুবিকার মা ৷ প্রধানমন্ত্রী ফোনে জানান, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন ৷ এবং এই কঠিন রোগকে জয় করবেন ৷ ফাতমা লিয়াকত হয়তো সেদিন কিছু বলে উঠতে পারেননি ৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ফোন পেয়ে তিনিও আপ্লুত ছিলেন ৷
রুবিকার মায়ের চিকিৎসার জন্য দুর্দান্ত ব্যবস্থা করেন মোদি
ওই দিনের পরে, প্রধানমন্ত্রী মোদির ফোন কল হয়তো আসেনি ৷ তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিদিনই রুবিকার কাছে কল আসত ৷ তাঁর মায়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আপডেট নেওয়া হত। শুধু তাই নয়, এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সবরকম পরামর্শ এবং সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থাই করা হয়েছিল ৷
রুবিকার ঘটনায় মোদিকে নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি পরিবর্তন
রুবিকার পরিবারের জন্য নরেন্দ্র মোদি যা করেছেন, তা তাঁরা কখনও ভাবতেও পারেন নি ৷ রুবিকার সঙ্গে মোদির পরিচিতি খুব বেশিদিনের নয় ৷ ২০১৯-এর ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছিল রুবিকা লিয়াকতের ৷ ওই দিন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমনের সম্মানে আয়োজিত মধ্যহ্নভোজনে রুবিকাকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পিএমও-র তরফে ৷ রুবিকার পরিবার ভাবতেও পারেনি, যে মোদির নেগেটিভ ছবি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে গত দু’দশক ধরে রয়েছে ৷ বা মুসলিমদের মোদিকে নিয়ে যে ভয় রয়েছে, বলেই সর্বত্র প্রচার করা হয় ৷ সেই নরেন্দ্র মোদিই, লিয়াকত পরিবারের সবচেয়ে কঠিন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ৷ সাহায্য করেছেন প্রতি মুহূর্তে ৷
রুবিকার মায়ের মৃত্যুর পর শোকপ্রকাশ করে চিঠি লেখেন নরেন্দ্র মোদি
ফাতমা লিয়াকতের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরে, প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর শোকবার্তা জানিয়ে লিয়াকত পরিবারকে চিঠি লেখেন ৷ যেখানে রুবিকার মায়ের সম্পর্কে অনেক কিছু লেখার পাশাপাশি লিয়াকত পরিবারকে সান্ত্বনাও দেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর এই চিঠি পাওয়ার পরে, রুবিকার বাবা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন ৷ তিনি তাঁর মেয়েদের জানিয়েছিলেন, যে এই দুঃখের সময়ে, প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর ফোন এবং তারপরে এই চিঠি, লিয়াকত পরিবার কখনই ভুলতে পারবে না।
বেশি প্রচার না করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই মোদির পুরনো স্বভাব
এমন উদাহরণ এর আগেও অনেক রয়েছে মোদির ৷ এমন অসংখ্য মানুষদের বিপদের সময়ে সাহায্য করেছেন নরেন্দ্র মোদি ৷ অনেকেই এমন রয়েছেন, যে মোদি তাঁকে সাহায্য করেছেন এমনটা সর্বসমক্ষে জানালে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে প্রচার হয়ে যাবে, তাই তারা ঘটনাগুলি জানাতে চাননি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কখনও এই ঘটনাগুলির কথা সবাইকে জানাননি ৷ চুপচাপ মানুষকে সাহায্য করে গিয়েছেন ৷ তাঁদের বিপদের সময়ে পাশে থেকেছেন ৷
সিনিয়র সাংবাদিক উদয় মাহুরকরকেও এভাবে তাঁর অত্যন্ত বিপদের সময়ে সাহায্য করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি ৷ মাহুরকরের সঙ্গে মোদির সুসম্পর্ক বহু দিনের ৷ প্রায় সাড়ে তিন-দশক ধরে তাঁরা একে অপরকে চেনেন ৷ উদয় মাহুরকরের স্ত্রী স্মিতা মাহুরকর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৷ শরীরে অক্সিজেনের লেভেলও দ্রুত কমতে শুরু করে তাঁর ৷ অক্সিজেন লেভেল ৯৫ থেকে নেমে এসেছিল ৫৫-তে ৷ জীবনহানির আশঙ্কা ছিল তাঁর ৷ দিল্লিতে হাসপাতালগুলির অবস্থাও তখন অত্যন্ত খারাপ ছিল ৷ স্মিতাদেবীর সুচিকিৎসার জন্য তখন নিজেই উদ্যোগী হন প্রধানমন্ত্রী ৷ সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেন তিনি ৷
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তি তাঁর রাজনীতির শত্রু এবং পেশাদার সমালোচকরা এমনভাবে তৈরি করেছেন, যে তাঁর হৃদয়ে কারোর প্রতি কখনও সহানুভূতি থাকতে পারে না। তবে মোদি আসলে একেবারেই তেমন মানুষ নন ৷ সমালোচকরা মোদির কান্নাতেও তাঁর নিজের স্বার্থ এবং রাজনীতি খোঁজেন ৷ কিন্তু বিপদের সময়ে নরেন্দ্র মোদিই পাশে থেকেছেন ৷ দুঃখের সময়ে তিনিই উৎসাহ জুগিয়েছেন ৷ এমন ঘটনার উদাহরণ প্রচুর রয়েছে ৷ কিন্তু খুব কম সময়েই তা হয়তো সবার সামনে আসে ৷ এবং দেশের মানুষ জানতে পারেন ৷
Written By: Brajesh Kumar Singh