পাসওয়ার্ড শেয়ারিংয়ে লাগাম টানছে Netflix
এক্ষেত্রে একটি নতুন লগ ইন ওয়ার্নিং সিস্টেম আনছে Netflix। যার উদ্দেশ্য, যদি কেউ মূল অ্যাকাউন্টের সঙ্গে একসঙ্গে না থাকেন, তাহলে তাঁকে সাবস্ক্রিপশন নিয়ে আলাদা অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে দূর-দূরান্তে সবাই পাসওয়ার্ড শেয়ার করে একটি অ্যাকাউন্টের সুবিধা নিতে পারবেন না। সিরিজ বা সিনেমা দেখার জন্য নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে তাঁকে। এক্ষেত্রে একটি লগ ইন ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীর মেইল বা ফোন নম্বরে একটি কোড যাবে এবং প্রয়োজনীয় ভেরিফিকেশন হয়ে যাবে। আপাতত, সীমিত সংখ্যক অ্যাকাউন্টে ফিচারটির পরীক্ষা করা হচ্ছে। একবার টেস্টিং শেষ হয়ে গেলে, প্রতিটি ভার্সনে উপলব্ধ হবে এই ফিচার।
advertisement
এই পদক্ষেপের নেপথ্যের কারণ
পাসওয়ার্ড শেয়ার করার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা তথ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। একাধিক সমীক্ষার দাবি, পাসওয়ার্ড শেয়ার করে নেওয়ার সংখ্যাটা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৪০ শতাংশ আমেরিকাবাসী নিজেদের Netflix লগ ইন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন না। অর্থাৎ পাসওয়ার্ড শেয়ারের ভরসায় চলে তাদের Netflix। গত মাসেই LendingTree-এর একটি সমীক্ষা সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যবহারকারীরা প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষকে তাঁদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে দিয়েছেন। সংস্থার আশা, নতুন ফিচারের হাত ধরে কিছুটা হলেও কমবে পাসওয়ার্ড শেয়ারিং।
২০১৯ সালে Netflix-এর প্রোডাক্ট হেড গ্রেগ পিটার্স (Greg Peters) জানিয়েছেন, এই সমস্যা মূলত ব্যবহারকারীর ঘনিষ্ঠদের মধ্যেই দেখা যায়। অর্থাৎ বেশিরভাগই তাঁদের বন্ধু ও পরিবারের মধ্যে পাসওয়ার্ড শেয়ার করে থাকেন। যা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন।
কিন্তু এখন কেন?
Netflix-এর এই পদক্ষেপের পিছনে ঠিক কী কারণ রয়েছে? কেনই বা এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার তরফে এই ধরনের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে? বিশেষজ্ঞদের কথায়, পাসওয়ার্ড শেয়ারিংয়ের সমস্যা নতুন নয়। Netflix বা অন্যান্য সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক ওয়েবসাইটেও এই একই সমস্যা দেখা যায়। তাছাড়া শুরু থেকেই Netflix-এ এই ধরনের সমস্যা দেখা গিয়েছে। এক্ষেত্রে এত দিন পর এই ধরনের কোনও বিধিনিষেধ জারি করার পিছনে নিশ্চয় একটি কারণ রয়েছে। আসলে এই পদক্ষেপের সঙ্গে লভ্যাংশের সরাসরি যোগ রয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে নতুন ব্যবহারকারী যুক্ত হওয়ার সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্তরে ছোটখাটো নানা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে একটা হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা রয়েছে। এক্ষেত্রে Amazon, Disney+Hotstar থেকে শুরু করে নানা প্ল্যাটফর্ম বাজারে হাজির। তাই বাজারে একচ্ছত্র জায়গা ধরে রাখাও কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে হিন্দি, বাংলা-সহ একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় ছোট ছোট স্ট্রিমিং অ্যাপ এসে যাওয়ায় আয়ের পরিমাণও কমছে। আর ঠিক এই কারণেই বোধ হয় নিজের পলিসি ও আয়ের দিক থেকে আরও বেশি করে সচেতন হতে চাইছে Netflix।
এক নজরে Netflix
২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জুড়ে ২০০ মিলিয়নের বেশি গ্রাহক ছিল Netflix-এ। বর্তমানে দেশে মোট চারটি সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান দিচ্ছে এই অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ। এক্ষেত্রে মোবাইল ওনলি সাবস্ক্রিপশন প্ল্যানের দাম ১৯৯ টাকা। যার সাহায্যে ৪৮০ p পর্যন্ত রেজোলিউশনে ভিডিও দেখতে পাচ্ছেন মোবাইল ব্যবহারকারীরা। এটি শুধুমাত্র Netflix অ্যাপের সাহায্যেই ব্যবহার করা যায়। এর পর বেসিক প্ল্যান অর্থাৎ ৪৯৯ টাকার সাবস্ক্রিপশনে সর্বোচ্চ ৪৮০ p পর্যন্ত রেজোলিউশনে ভিডিও দেখা যায়। এক্ষেত্রে যে কোনও মোবাইল, টিভি বা ডেস্কটপে ব্যবহার করা যেতে পারে ৪৯৯ টাকার এই প্ল্যান। তবে, একসঙ্গে একটি স্ক্রিনের ক্ষেত্রেই সীমিত এই পরিষেবা। এর পর রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড প্ল্যান। ৬৪৯ টাকার এই প্ল্যানে ফুল HD রেজোলিউশনে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের সুবিধা রয়েছে। এখানে একসঙ্গে অর্থাৎ একই সময়ে দু'টি স্ক্রিনে ভিডিও দেখা যাবে। এছাড়াও একটি হাই টায়ার প্রিমিয়াম প্ল্যান রয়েছে। মাসিক ৭৯৯ টাকার প্ল্যানে 4K + HDR ভিডিও দেখা যাবে। এক্ষেত্রে একসঙ্গে চারটি স্ক্রিনে ভিডিও দেখার সুবিধা রয়েছে।