আরও পড়ুন:সূচবিহীন জাইকোভ-ডি দেওয়া হবে ৭ রাজ্যে, জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি
কেন ভারত ও রাশিয়া এই লজিস্টিক চুক্তি করতে চাইছে?
সামরিক হার্ডওয়্যার এবং প্রযুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (USA) সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়লেও রাশিয়ার (Rusia) সঙ্গে বহু দশক ধরেই ভারতের ঐতিহ্যগতভাবে গভীর প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রয়েছে। চিন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান নৈকট্য মস্কো-নতুন দিল্লির সম্পর্কে খানিক শীতলতা আনলেও তা বাড়েনি। তাই সেক্ষেত্রে রেসিপ্রোক্যাল এক্সচেঞ্জ অফ লজিস্টিক এগ্রিমেন্ট সামরিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৯ সালেই এই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত করার জন্য আরও সময় নেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের চুক্তিকে একটি বৃহত্তর ব্যবস্থার অংশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা দুই দেশকে তাদের সামরিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে অনুমতি দেবে। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (Observer Research Foundation) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই চুক্তিগুলি ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাতে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে ভারত আরও এগিয়ে যাবে।
advertisement
আরও পড়ুন:ভয় দেখাচ্ছে ওমিক্রন! শীঘ্রই আসতে পারে ভ্যাকসিন বুস্টার, জানুন কারা আগে পাবেন এই ডোজ!
চুক্তির মূল বিষয়বস্তু কী?
লজিস্টিক বিনিময় চুক্তিগুলি প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অংশীদার দেশগুলি একে অপরের সামরিক সুবিধা যেমন বন্দর, ঘাঁটি এবং সামরিক স্থাপনাগুলি ব্যবহার করতে পারবে। দুই দেশ পরস্পরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে। একে অপরের সামরিক ঘাঁটি থেকে মিলবে খাদ্য, বস্ত্র থেকে চিকিৎসা পরিষেবা। জ্বালানি সংগ্রহ থেকে সামরিক বিমান ও জাহাজ মেরামতিতে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতেও পারবে দু'টি দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে সন্ত্রাস মোকাবিলা, সমুদ্র নিরাপত্তা ও বিশেষ অভিযানের ক্ষেত্রে দু'টি দেশই সুবিধা পাবে। সামগ্রিকভাবে আপৎকালীন মানবিক সাহায্য ও ত্রাণকাজ আরও দ্রুতগতিতে করা সম্ভব হবে। এই ধরনের চুক্তিগুলি প্রচুর সময় ও অর্থের সাশ্রয় করে। কারণ, একটি দেশ অন্য দেশে গিয়ে বিমান জ্বালানি, খাদ্য ও জল এবং বন্দর পরিষেবা পাবে। যাতে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি বন্দর পরিদর্শন এবং যৌথ মহড়ার সময় একে অপরের যুদ্ধজাহাজ, সামরিক বিমান রক্ষণাবেক্ষণ, সেনাদের থাকার জায়গা-সহ ইত্যাদি সুবিধা পাবে।
লজিস্টিক্যাল বিনিময় চুক্তির কৌশলগত তাৎপর্য কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লজিস্টিক চুক্তির ফলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ভারতীয় নৌবাহিনী (Indian Navy)। কারণ তারাই দেশের জলসীমার সুরক্ষার দায়িত্বে। এই চুক্তির ফলে সমুদ্রে বেশি সময় নজরদারি করার ক্ষমতা বাড়ে। মনোহর পারিক্কর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের (Manohar Parrikar Institute for Defence Studies and Analyses) একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে রাশিয়ার সঙ্গে লজিস্টিক বিনিময় চুক্তি করলে ভারতের নৌবাহিনী সুমেরু অঞ্চলে (Arctic) রাশিয়ান নৌ ন্দরগুলিতে সুবিধা পাবে। এই ভাবে ভারতীয় নৌবাহিনীর অপারেশনাল অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে। কারণ, বর্তমানে উত্তর সুমেরু বা আর্কটিক কাউন্সিলের বর্তমান সভাপতি পদে রয়েছে রাশিয়া।
প্রতিষ্ঠানটি আরও উল্লেখ করেছে যে ঘনিষ্ঠ ভারত-রাশিয়ান সামরিক সম্পর্ক ও লজিস্টিক বিনিময় চুক্তির অর্থ হল যে উভয় পক্ষই ভবিষ্যতে যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একে অপরের থেকে সুবিধা নিতে পারে। ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে ফাইটার জেট সহ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম পেয়েছে। জানা যাচ্ছে, মস্কোর থেকে দীর্ঘমেয়াদী লিজে পারমাণবিক শক্তিচালিত অ্যাটাক সাবমেরিন (Nuclear-Powered Attack Submarine) পেতে চাইছে ভারত। যেখানে ভারত সুমেরু অঞ্চলে একটি স্টেশন স্থাপন করতে চাইছে। তাই রাশিয়ার সঙ্গে লজিস্টিক বিনিময় চু্ক্তির ফলে ভারত এই অঞ্চলে রাশিয়ান বন্দরগুলির সুবিধা পাবে। আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে সুমেরু অঞ্চলে ভারতের উপস্থিতি চিনের কৌশলগত অবস্থানের একটি কৌশলগত পাল্টা চাপ হিসাবে কাজ করবে।
ভারতের কি অন্যান্য দেশের সঙ্গে একই রকম চুক্তি আছে?
ভারতের আরও ছয়টি দেশের সঙ্গে লজিস্টিক্যাল বিনিময় চুক্তি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান (Japan), অস্ট্রেলিয়া (Australia), সিঙ্গাপুর (Singapur), ফ্রান্স (France) এবং দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)। ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট (LEMOA) স্বাক্ষর করার পরেই ভারত অন্যান্য দেশের সঙ্গে এই ধরনের চুক্তি করেছে। আগামীদিনে ব্রিটেন ও ভিয়েতনামের সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তি করছে চাইছে ভারত।
ভারত-রাশিয়া আগামী দিনের সম্পর্ক: সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও ভারত-আমেরিকার এই সম্পর্কের উন্নতির ব্যাপারে অনেকটাই নীরব থেকেছে রাশিয়া। তবে ভারত যখন আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত কোয়াড গঠন করে, তখন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ প্রকাশ্যে কথা বলতে শুরু করেন। যদিও, দাবি অনুযায়ী কোয়াডও কোনও সামরিক জোট নয় এবং বিশেষ কোনও দেশকে লক্ষ্য করে গঠিত হয়নি। আমেরিকার সঙ্গে চিনের সম্পর্কের অবনতিও বেজিং ও মস্কোকে আরও কাছাকাছি এনে দিয়েছে। পুরো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে ভারত-চিনের মধ্যে সাম্প্রতিক সম্পর্ক। লাদাখে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই দেশে সেনা। ঘটনায় ভারতীয় ২০ জন সেনা শহিদ হয়েছেন। চিনও পরবর্তীতে স্বীকার করেছে যে, ওই ঘটনায় তাদের বেশ কয়েকজন সেনা নিহত হয়েছেন। প্রতিরক্ষা বিশষজ্ঞরা বলছেন যে নতুন এই ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণ ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের জন্য একটি বড় হুমকি তৈরি করেছিল। তবে পুতিনের এই সফরের পরে সেই হুমকি অনেকটাই কেটে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে, আগামীদিনে আমেরিকাকে আটকাতে রাশিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হবে নয়াদিল্লির সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক পুনরায় জোরদার করে তোলা। ভারতের কাজ হবে বহু দশকের পুরনো মিত্রতা বজায় রেখে যাওয়া। তবে, মার্কিন চাপ অবশ্যই ভারতকে সহ্য করতে হতে পারে। মার্কিন আপত্তি উড়িয়েই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চুক্তি হয়েছে। তখন এই দুই শক্তির সঙ্গে কী ভাবে ভারত সমণ্বয় করে চলবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।