এই দাবির নেপথ্যে বিরোধীদের যুক্তি বেশ সক্রিয়। ২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট পর্যন্ত ভারতের সংবিধানে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে ছিল জম্মু ও কাশ্মীর। এই রাজ্যের সীমানা ছিল তার নিজস্ব সংবিধানের অধীনে, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের কোনও জায়গা ছিল না। এই কারণেই ১৯৯১ সালের পরে জম্মু ও কাশ্মীরে আর জনগণনা করা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, ২০২৬ সাল পর্যন্ত রাজ্যে আর সীমানা প্রসারণ ও পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই বলেও আইন জারি করেছিল বিধানসভা। কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকে ছবিটা বদলে গিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার খর্ব করা হয়েছে, তাকে অন্তর্গত করা হয়েছে কেন্দ্রশাসিত রাজ্যের অধীনে।
advertisement
বলা বাহুল্য, রাজ্যে বড়সড় ক্ষমতায় থাকা ন্যাশনাল কনফারেন্স দল এই পরিবর্তন ভালো চোখে দেখেনি। এই দলের সাংসদ এবং রাজ্যের কূটনীতির অন্যতম প্রধান মুখ ফারুখ আবদুল্লাহ (Farooq Abdullah) সুপ্রিম কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন। যদিও বিজেপি সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের সীমানা প্রসারণ ও পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে ডেলিমিটেশন কমিশন স্থাপন করা হয়েছে। যার দায়িত্বে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক রঞ্জন প্রসাদ দেশাই (Ranjana Prakash Desai)। তাঁর সঙ্গে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ইলেকশন কমিশনার সুশীল চন্দ্র (Sushil Chandra), জম্মু ও কাশ্মীরের স্টেট ইলেকশন কমিশনার কে কে শর্মা (K K Sharma)। এছাড়া রয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স সাংসদ ফারুখ আবদুল্লাহ, মহম্মদ আকবর লোনি (Mohammad Akbar Lone) এবং হাসনাইন মাসুদি (Hasnain Masoodi)। আছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রাজ্যের ইউনিয়ন মিনিস্টার ড. জিতেন্দ্র সিং (Dr Jitendra Singh) এবং যুগল কিশোর শর্মা (Jugal Kishore Sharma)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে জম্মু ও কাশ্মীরে যদি জিততে হয়, তাহলে বিজেপি সরকারের রাজ্যে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করতেই হবে। এই লক্ষ্যেই সীমানা প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন না, বর্তমানে রাজ্যে ১০৭টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি আসন আবার রয়েছে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে। সেই মতো জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন সঙ্ঘটিত হবে মূলত ৮৩ আসনে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এক্ষেত্রে বিজে সরকার ৭টি আসন বাড়ানোর কথা ভাবছে সীমানা প্রসারণের মাধ্যমে, যা তাদের নির্বাচনে জয়লাভের সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি আরেকটা কথাও মাথায় রাখতে হবে। কেন্দ্রশাসিত রাজ্যের জেলা উন্নয়ন কাউন্সিলের নির্বাচনে জম্মুতে বিজেপি ৬টি কাউন্সিল দখল করতে পারলেও কাশ্মীরের কাউন্সিল ছিল মূলত পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকর ডিক্লারেশন (People's Alliance for Gupkar Declaration), সংক্ষেপে PAGD-র হাতে। যা নিঃসন্দেহেই বিজেপির এই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে বাধা! এবার সেই প্রতিবন্ধকতা সীমানা পরিবর্তনের মাধ্যমে মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিমত বিরোধী দলের!