জাইডাস ক্যাডিলা সংস্থার দাবি, Zycov-D একটি প্লাজমিড ডিএনএ (plasmid DNA) ভ্যাকসিন। এটা একধরনের ডিএনএ অণু যা প্লাজমিড নামে পরিচিত। এই প্লাজমিডগুলি কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ রুখতে স্পাইক প্রোটিন SARS-CoV-2 তৈরি করতে পারে। যা খুব তাড়াতাড়ি দেহের অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে। অন্যান্য কোভিড ভ্যাকসিনগুলির ক্ষেত্রে দুটটি ডোজ নিতে বলা হলেও এই Zycov-D কিন্তু তিনটি ডোজ নিতে বলা হয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডোজগুলি ২৮ দিনের ব্যবধানে নিতে বলা হয়েছে। এই ভ্যাকসিনটি সেন্ট্রাল গর্ভমেন্টস ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজি (Central Government’s Department of Biotechnology) এবং ইন্ডিয়া কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (ICMR) সহায়তায় তৈরি করা হয়েছ।
advertisement
অনেকেই ভাবতে পারেন এই ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ ও কতটা কার্যকরী? সেক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো Zycov-D প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ট্রায়াল হয়ে গিয়েছে। মোট ২৮০০০ স্বেচ্ছাসেবী এই ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ১২-১৮ বছরের মধ্যে ছিল।
জাইডাস গ্রুপের চেয়ারম্যান পঙ্কজ আর পটেল (Pankaj R Patel) জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ভালো ফল এসেছে। এটি নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। যাঁদের শরীরে করোনার বেশি উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের শরীরে টিকার কার্যকারিতা ৬৭%। যাঁদের শরীরে করোনা উপসর্গ কম রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে এটা অতি ভালো ফল করেছে।
প্রশ্ন উঠছে, এই ভ্যাকসিন করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের (Delta Variant) জন্য কতটা কার্যকরী? দেশ জুড়ে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছিল, তখন সংশ্লিষ্ট সংস্থা দেশ জুড়ে পঞ্চাশটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়েছিল। ফলে সংস্থা দাবি করেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের বিরুদ্ধে এই ভ্যাকসিন কাজ করতে পারে। কিন্তু কত শতাংশ করে, তার নির্দিষ্ট কোনও পরিমাণ সংস্থা জানায়নি। তবে জাইডাস ক্যাডিলা দাবি করেছে যেহেতু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৯৯% ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট ছিল এবং তাদের করা ট্রায়ালেও যেহেতু ভালো ফল এসেছে, তাই ভ্যাকসিনটি কার্যকরী। কিন্তু, ভ্যাকসিনে যদি কোনও সংশোধন করতে হয় তাহলেও তারা সেটা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
Zycov-D যেহেতু ডিএনএ ভ্যাকসিন সে ক্ষেত্রে একটু উদ্বেগ থাকতে পারে বলে অনেকেই মনে করেছেন। ভ্যাকসিন গবেষক ডঃ মার্গারেট এ লিউ (Dr Margaret A Liu) ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদনে লিখেছিলেন যে ডিএনএ ভ্যাকসিন অনেক সময় অটো-ইমিউনিটিতে আঘাত হানতে পারে। যদিও জাইডাস গ্রুপের চেয়ারম্যান পঙ্কজ আর পটেল বলেছেন এটি সম্পূর্ন নিরাপদ।
Zycov-D মূলত ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য নিয়ে আসা হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে এখনও কোনও সিদ্ধান্তের ঘোষণা হয়নি। গবেষকরা ভ্যাকসিনের ব্যবহার সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য বিচার করেই Zycov-D প্রয়োগের অনুমতি দেবেন বলে জানা গিয়েছে। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক অনুমতি দিলেই বছরে ১২০ মিলিয়ন ডোজ তৈরি করা হবে, এর মানে এক বছরে চল্লিশ মিলিয়ন মানুষকে তিনটি ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠবে। সংস্থার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সব কিছু ঠিক থাকলে অগস্টের মাঝামাঝি এর উৎপাদন শুরু হবে। প্রতি মাসে ১০ মিলিয়ন উৎপাদন করা হলে ডিসেম্বরের মধ্যে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডোজ সরবরাহ করা যাবে।