করোনাকালে শরীরের জন্য যে অক্সিজেন ব্যবহার করা হয় তা মূলত লিক্যুইড অক্সিজেন। কোভিড ভাইরাস মূলত ফুসফুসে আক্রমণ করে শ্বাসের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি হলে যে অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে তা হল এই লিক্যুইড অক্সিজেন।
কী ভাবে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে লিক্যুইড অক্সিজেন?
লিক্যুইড অক্সিজেন প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপ আছে। সব থেকে বহুল প্রচলিত ধাপ বা পদ্ধতি হল এয়ার সেপারেশন ইউনিট বা এএসএউ ASU)। এএসইউ আদপে হল এক ধরনের প্লান্ট যা আসলে বিভিন্ন রকম গ্যাস প্রস্তুত করতে সক্ষম। ফ্র্যাকশনাল ডিস্টিলেশন মেথডের (Fractional Distillation Method) মধ্যে দিয়ে বাতাসে থাকা অক্সিজেন টেনে নিয়ে কৃত্রিম শ্বাসবায়ুর জন্য অক্সিজেন প্রস্তুত করা হয়। বাতাসে মোট থাকা ৭৮% শতাংশ নাইট্রোজেন ও ২১% অক্সিজেন ও ১% অন্যান্য গ্যাসগুলির মধ্যে অক্সিজেনকে টেনে নিয়ে প্রথমে প্ল্যান্টের ভেতর লিক্যুইড ফর্মে জমা করা হয় ও পরে তাকে অন্যান্য নানা কম্পোনেন্টে ভেঙে ফেলে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
advertisement
পরিবেশে অবস্থিত বায়ুকে প্রথমে -১৮১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তরলীকৃত অক্সিজেনের রূপ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বাতাসে অবস্থিত নাইট্রোজেন -১৯৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফুটে যেতে পারে। অতএব তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি এখানে কিছুটা জটিল। অক্সিজেন তরলীকৃত হলেও, নাইট্রোজেন গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। আবার বায়ুতে থাকে আরগন (Argon), সেটি -১৮৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় গ্যাস থেকে তরলে পরিণত হয়। অতএব লিক্যুইড অক্সিজেন প্রস্তুতির সময়ে আরগনও অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে যায় এবং অক্সিজেনের মধ্যে কিছুটা আরগন দেখতে পাওয়া যায়। অক্সিজেন পুরোপুরি প্রস্তুত করার পর তাকে ক্রাইওজেনিক সিলিন্ডারে (Cryogenjc Cilimder) ট্রান্সফার করা হয়।
ক্রাইওজেনিক সিলিন্ডার কাকে বলে?
যে সিলিন্ডারে বিভিন্ন পদার্থ খুব শীতল তাপমাত্রায় থাকতে পারে তাকে ক্রাইওজেনিক সিলিন্ডার বলে। এই সিলিন্ডার বিভিন্ন গ্যাসের সহজ পরিবহনের জন্য তৈরি হয়। এর ভিতর বিভিন্ন গ্যাস -৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় থাকতে পারে।
ক্রাইওজেনিক সিলিন্ডার ছাড়াও অক্সিজেন প্রস্তুত করা যায়। বাতাসে অবস্থিত বিভিন্ন গ্যাসকে খুব উচ্চচাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কঠিন কোনও বস্তুর কাছাকাছি আনা সম্ভব। এই পদ্ধতিকে আ্যাডসরবেন্ট (Adsorbent) পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে জিওলাইট (Zeolite) যুক্ত কোনও পাত্র ব্যবহার করে অক্সিজেন প্রস্তুত সম্ভব।
অক্সিজেন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পূর্বশর্ত মেনে চলা প্রয়োজন। তাপমাত্রা খুব বেশি হলে অক্সিজেন পুড়ে যেতে পারে। তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ একান্ত কাম্য।