১৯৯৯ সালে হওয়া সুপার সাইক্লোনে তছনছ হয় ওড়িশার কয়েকটি জেলা। ওই বছর ২৯ অক্টোবর ওড়িশায় পারাদ্বীপে আছড়ে পড়ে এই ঘূর্ণিঝড়। ৩০০ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন ওই সুপার সাইক্লোন তছনছ করে দেয় ওড়িশার ৬ জেলাকে। সরকারি হিসাব জানিয়েছিল, ওই সাইক্লোনের জেরে প্রাণ গেছে ১০,০০০ মানুষ। কিন্তু সেখানেই যদি আমরা ২০২১ সালের সাইক্লোন ইয়াসের দিকে নজর দিই, তবে দেখা যাবে এই ঘুর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলায় প্রাণ হারিয়াছেন মাত্র ৬ জন। এই পরিসংখানের বিচারে এটা বলাই যায় যে, ভারত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে (Disaster Risk Reduction) উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
advertisement
বুধবার স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ে ঘুর্ণিঝড় ইয়াস। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলে সাইক্লোন মোকাবিলার প্রস্তুতি। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ের সহযোগিতায় চলে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম। ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ এই দুই রাজ্যের প্রায় ১৪ লক্ষেরও বেশি লোককে সরিয়ে আনা হয় নিরাপদ আশ্রয়স্থলে।
কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে নিখুঁত সমন্বয়, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস প্রক্রিয়াটির কঠোর অনুশীলন এবং শক্তিশালীকরণের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলা থেকে অনেকখানি নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে রাজ্যগুলি। দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমের জন্য তহবিলের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিগত ৫ বছরে যেখানে তহবিল হয়েছে ২৫,০০০ কোটি থেকে ৩০,০০০ কোটি টাকার, সেখানেই গত ১ বছরে ফান্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকাতে। এছাড়া ইয়াসের তাণ্ডবলীলা থেকে বাঁচতে গত দু'দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ ও ওড়িশা থেকে ৬ লক্ষেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে।
বুধবার ইয়াস স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার সময়, জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (NDRF) ১০৭টি দল মোতায়েন করে। এছাড়া ১৭টি সেনাবাহিনী কলাম এবং ৪টি যুদ্ধজাহাজও প্রস্তুত রাখা হয়। উপকূলরক্ষী বাহিনী তার পাঁচটি জাহাজ এবং একটি বিমানের মাধ্যমে নজরদারি চালায় এবং নৌবাহিনীর আরও পাঁচটি জাহাজ যে কোনও সঙ্কটজনক মুহূর্তের জন্য মোতায়েন রাখা হয়।
গত এক দশকে, ভারত উপকূলীয় জেলাগুলির আশেপাশে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে, বন্যা আটকাতে বাঁধ তৈরি করে, NDRF এবং SDRF (রাজ্য বিপর্যয় প্রতিক্রিয়া বাহিনী)-এ একাধিক দক্ষ প্রশিক্ষিত বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত করা হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র NDRF-এই প্রায় ১৪,০০০ কর্মী রয়েছে।