জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টিকে নিয়ে বিশ্বকে সঙ্কেত দিয়ে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে (United Nations General Assembly) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation), সংক্ষেপে WHO বায়ু মানের সূচকের (Air Quality Guidelines) গাইডলাইনে কিছু পরিবর্তন করেছে। WHO জানিয়েছে, বায়ু দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
জাতিসঙ্ঘের স্বাস্থ্য দফতর বায়ু মানের গাইডলাইনে সংশোধন করে জানিয়েছে, বিশ্বের মানুষকে সুস্থ রাখতে এবং বায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দূরে রাখতে বায়ুর মানের বিষয়টিকে নিয়ে আরও গভীর ভাবে ভাবা দরকার।
advertisement
WHO জানিয়েছে, বায়ু দূষণের প্রভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতির মাত্রা বৃদ্ধি হয়েছে তার ‘উল্লেখযোগ্য প্রমাণ’ পাওয়া গিয়েছে। বিশ্ব জুড়ে এই ক্ষতিকর প্রভাবের ছাপ দেখা গিয়েছে।
নতুন সংশোধনী গাইডলাইনের আগে বাতাসে অবস্থিত কণা পদার্থ স্তর PM২.৫-কে নিরাপদ বলে মনে করা হত। কিন্তু নতুন নির্দেশের পর এই স্তরকে বিপজ্জনক তালিকায় ফেলা হয়েছে। হু জানিয়েছে, PM২.৫ “রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করতে পারে, প্রাথমিকভাবে কার্ডিওভাসকুলার এবং শ্বাসযন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।"
আরও পড়ুন - IPL 2021-র টাকার ধারেকাছে নেই T20 World Cup 2021-র পুরস্কার মূল্য! চমকে দেবে Dravid-র বেতনও
এই নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের বিশ্বের মোট ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ দূষিত বায়ুর এমন স্তরে বাস করছিল যেখানে PM২.৫ স্তরের উপস্থিতি ২০০৫ সালে প্রস্তাবিত বায়ু মানের গাইডলাইনে উল্লিখিত নিরাপদ স্তরের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।
ওজোন (O3), নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2), সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) এবং কার্বন মনোক্সাইড (CO)-এর নিরাপদ স্তরেও সংশোধন করা হয়েছে।
নতুন AQGs প্রস্তাবনার পর দেখা যাচ্ছে যে ভারতের প্রতিটি শহর এবং গ্রাম বায়ু দূষণ দ্বারা প্রভাবিত এবং ক্রমাগত তা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।
আরও পড়ুন - PHOTOS- কি কাণ্ড! প্রেগন্যান্ট মহিলা জন্ম দিলেন সাড়ে ছয় কেজির সন্তানের, দেখুন
স্বাস্থ্যে বায়ু দূষণের প্রভাব
মানব স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে এমন সব চেয়ে বড় এবং ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় হল বায়ু দূষণ। ক্ষতিকারক প্রভাবের দিক থেকে বায়ু দূষণ জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে কোনও অংশে কম যায় না।
হু-এর তথ্য অনুযায়ী, বায়ু দূষণের ফলে প্রতি বছর ৭ মিলিয়ন (৭০ লক্ষ) মানুষের অকালে মৃত্যু হয়। এর প্রভাবে মানবজাতির লক্ষ লক্ষ বছরে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে।
এই নতুন গাইডলাইনে ‘শিশুদের ফুসফুসের আকারের বৃদ্ধিতে বাধা এবং কার্যকারিতা হ্রাস, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনার’ বিষয়টিকে বায়ু দূষণের সরাসরি প্রভাব হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দূষিত বায়ুর প্রভাবে ‘ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ এবং স্ট্রোক’ দেখা যাচ্ছে যা অনেককেই অকালে মৃত্যুর দরজা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। এছাড়া ডায়াবেটিস এবং নিউরোডিজেনারেটিভ কন্ডিশনকে বায়ু দূষণের প্রভাবের তালিকায় যোগ করা হয়েছে। নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে বায়ু দূষণ তামাক সেবন এবং অস্বাস্থ্যকর ডায়েটের মতো ‘বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির’ পর্যায়ে চলে আসছে। এর ফলে মানবজাতির ওপর রোগের বোঝা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, মানুষ যত বেশি দূষিত বায়ুর আশেপাশে থাকবে, সংস্পর্শে আসবে, স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব তত বেড়ে যাবে। যারা হাঁপানি, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) রোগে ভুগছেন এটি তাঁদের জন্য আরও ক্ষতিকারক। প্রৌঢ়, শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও বায়ু দূষণ খুবই বিপজ্জনক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (IARC) ২০১৩ সালে বহিরাগত বায়ু দূষণ এবং কণা পদার্থকে কার্সিনোজেনিক হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যদি বায়ুর মানের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তবে এটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনকেও ঠেকাতে সাহায্য করবে। যদি দেশগুলি নতুন গাইডলাইনকে লাগু করতে পারে তবে PM২.৫ প্রভাবিত মৃত্যুর সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমানো যাবে।