এলন মাস্কের প্রাথমিক ধাপে ট্যুইটার বোর্ডে থাকার প্রস্তাব অস্বীকার:
মাত্র সপ্তাহদুয়েক আগেই চলতি মাসের শুরুতে মাস্ক কোম্পানির ২.৯ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার ক্রয় করেন। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানির বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হয়ে ওঠেন মাস্ক। এরপরই ট্যুইটার বোর্ডের পক্ষ থেকে মাস্ককে একটি বিশেষ সম্মান ও আসন নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই সময় অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড় থেকে ট্যুইটার বোর্ডের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
advertisement
এলন মাস্ক তাঁর সিদ্ধান্ত বদল করলেন কেন?
এবিষয়ে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন মাস্ক বরাবরই একগুঁয়ে স্বভাবের। পাশাপাশি রুগ্নপ্রায় শিল্পকে টেকওভার করতে এলনের জুড়ি মেলা ভার। এমনকী বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মাস্ক। বর্তমানে ট্যুইটারে তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা নেহাত কম নয়। সেই সংখ্যাটি বিশ্বের যে কোনও বিলিয়নারকে পিছনের সারিতে ফেলে দিতে পারে এক নিমেষে। বর্তমানে ট্যুইটারে মাস্কের ফলোয়ার সংখ্যা ৮৩ মিলিয়ন। বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে ট্যুইটার পেজে উপস্থিতির নিরিখে গোটা বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছেন মাস্ক।
জানা গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ট্যুইটার পেজে লক্ষ লক্ষ ফলোয়ারদের কাছেই টেকওভার নিয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলেন মাস্ক। পাশাপাশি ট্যুইটার বোর্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়ে তাঁর ফলোয়ারদের কাছে স্পষ্ট ভাষায় মাস্ক জানতে চেয়েছিলেন বর্তমানে ট্যুইটার বোর্ডের কর্তারা ট্যুইটার অ্যাপটি পরিচালনার ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য যথেষ্ট কাজ করছে কি না? পাশাপাশি তাঁর ফলোয়ারদের উদ্দেশ্যে মাস্ক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন- ট্যুইটার বোর্ড তার সঠিক নীতি পালন করছে কি না!
মাস্কের এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁর ফলোয়াররা অবশ্য তাঁকেই পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন বর্তমানে সঠিক কাজ করছে না ট্যুইটার বোর্ড। তাতে ট্যুইটার ব্যবহারকারী মানুষের বাকস্বাধীনতা যেমন লঙ্ঘিত হচ্ছে, পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নীতিহীনতার কাজও করছে ট্যুইটার। এবিষয়ে মাস্ককে সমর্থন জানিয়ে তাঁর ফলোয়াররা আরও জানিয়েছেন, 'বর্তমানে ট্যুইটার ডি ফ্যাক্টো পাবলিক টাউন স্কোয়ার হিসাবে কাজ করছে, বাক স্বাধীনতার নীতিগুলি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে মৌলিকভাবে তার প্রভাব গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তুলছে ক্রমশ'।
নিজের ফলোয়ারদের এমন সমর্থনযোগ্য উত্তর দেখে মাস্ক পাল্টা প্রশ্ন করেন, ট্যুইটার-এর বদলে অন্য কোনও নতুন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন কি না! মাস্কের এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁর ফলোয়াররা তাঁকে জানিয়েছেন- "আপনি যে কোনও মূল্যে ট্যুইটার টেকওভার করুন এবং এটিকে মুছে ফেলুন"! আর এতেই ট্যুইটার টেকওভারে প্রবল উৎসাহী হন মাস্ক। তবে এখনও পর্যন্ত নিজের দখলে না নিলেও ট্যুইটারের বিষয়ে কয়েক কদম এগিয়ে ইতিমধ্যেই একটি নতুন পেজ খুলে ট্যুইটারের একাধিক খুঁটিনাটি বিষয় যেমন- বিজ্ঞাপন বাদ দেওয়া, বিষয়বস্তুর সীমাবদ্ধতার নিয়ম সহজ করার পাশাপাশি জাল এবং স্বয়ংক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলির সঙ্গে প্ল্যাটফর্মের একাধিক সমস্যার সমাধান সহ আরও বেশ কিছু বিষয় পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ট্যুইটার টেকওভার নিয়ে মাস্কের প্রতিক্রিয়া কী?
এবিষয়ে তাঁর ট্যুইটার পেজে মাস্কের বক্তব্য কিছুটা অস্পষ্ট, তিনি জানিয়েছেন, 'যদি আমাদের ট্যুইটার বিড সফল হয়, আমরা স্প্যাম বটকে পরাজিত করব বা চেষ্টা করে মারা যাব'। এবিষয়ে তাঁর ফলোয়ারদের মতামতকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন মাস্ক। পাশাপাশি তিনি লিখেছেন যে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া একটি সঠিক নীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। তবে তিনি যে ট্যুইটার অধিগ্রহণ করবেনই, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু জানাননি মাস্ক।
ট্যুইটার বোর্ড ইউজারের স্বাধীনতার বিষয়ে কী করতে পারে?
মাস্কের এবং তাঁর ফলোয়ারদের এই মতামতের বিষয়টিতে আলোকপাত করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ট্যুইটার বোর্ড কোনও ইউজারের অ্যাকাউন্ট সাময়িক ভাবে স্থগিত করতে পারে যদি ইউজার ট্যুইটারের নীতি লঙ্ঘন করেন। কোনও ইউজার যদি বিতর্কিত কিছু পোস্ট করেন, যেমন, ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ভুল তথ্য এবং হিংসা উসকে দেওয়ার মতো কিছু, তাহলে সংস্থার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলা যেতে পারে। এর উদাহরণ হিসাবে পূর্বতন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (Donald Trump) ট্যুইটার থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও উঠে এসেছে বিশেষজ্ঞদের মতামতে।